চালককে ফোন করে জেরার মুখে

ঊনত্রিশ সেকেন্ডের ফোন কলই ডেকে আনল বিপর্যয়

মোবাইল কী ভাবে বৃহৎ বিনষ্টিরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তার দৃষ্টান্ত হিসেবে আঙুল উঠছে দৌলতাবাদের বাস-দুর্ঘটনার দিকে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

কলকাতা ও দৌলতাবাদ শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৫
Share:

জল থেকে তোলা হচ্ছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিকে। —ফাইল চিত্র।

ঠিক ঊনত্রিশ সেকেন্ডের একটি মোবাইল ফোন কল। তাতেই বিপত্তি!

Advertisement

কানে মোবাইল নিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটা বা চলন্ত ট্রেনের সামনে নিজেকে রেখে নিজস্বী তোলার ঝোঁক কতটা বিপজ্জনক, মাঝেমধ্যেই তার প্রমাণ মিলছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি ডেকে আনে। কিন্তু মোবাইল কী ভাবে বৃহৎ বিনষ্টিরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তার দৃষ্টান্ত হিসেবে আঙুল উঠছে দৌলতাবাদের বাস-দুর্ঘটনার দিকে।

সোমবার সকালে করিমপুর থেকে মালদহ যাওয়ার পথে যে-বাসটি দৌলতাবাদের কাছে বালির ঘাট সেতুর রেলিং ভেঙে জলে পড়ে গিয়েছিল, তার চালক সেই সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশি সূত্রের খবর, চালকের মোবাইলের ‘কল-ডিটেলস’ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, শেষ কলের সময়সীমা মাত্র ২৯ সেকেন্ড। বাসটি যখন জলে পড়ে যায়, তার একটু আগেই এসেছিল সেই ফোন। মুর্শিদাবাদের এক শীর্ষ পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, ফোনের লোকেশনও মিলে যাচ্ছে, বালির ঘাট। অর্থাৎ সেতুর টোল প্লাজা ছাড়িয়ে বাসটি তখন ভাণ্ডারদহ বিলের দিকেই ছুটছিল। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, বাসচালক সেন্টু বিশ্বাসের বন্ধু, স্থানীয় এক যুবকই ওই ফোন করেছিলেন। মঙ্গলবার তাঁকে থানায় ডেকে জেরা করেছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

বেঁচে ফেরা এক বাসযাত্রীর অভিযোগ, দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তে চালক এক হাতে মোবাইল ধরে কথা বলছিলেন এবং অন্য হাতে স্টিয়ারিং ধরে চালাচ্ছিলেন বাস। চালকের মোবাইলের কল রেকর্ড এবং ওই বেঁচে ফেরা যাত্রীর বয়ান মিলিয়ে দেখে তদন্তকারীদের সন্দেহ, ২৯ সেকেন্ডের ওই কলেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন চালক সেন্টু।

মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। দণ্ডনীয় অপরাধ। এই নিয়ে প্রচার কম হয়নি। চলছে লাগাতার অভিযানও। তা সত্ত্বেও অনেক চালক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে বিপদ ডেকে আনছেন বলে পুলিশের একাংশের অভিযোগ। তাঁদের মতে, সোমবার ওই বাসের চালক মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন। তার জেরেই দুর্ঘটনা। তখন বাসটির গতি কত ছিল, সেই বিষয়ে তদন্তকারীরা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি।

আরও পড়ুন: জল কেটে ভুশ করে ভেসে উঠছে লোকগুলো

তবে গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে কোমর বাঁধছে পুলিশ। নবান্নের দাবি, চলন্ত গাড়ির চালকদের মোবাইল ব্যবহার বন্ধে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ায় ২০১৬-র তুলনায় গত বছর দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। ২০১৬ সালে মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে ৮৫৪৬ জনের চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল পুলিশ। গত বছর অভিযুক্তের সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২২ হাজার ৩৩১।

পুলিশ মহলের স্বীকারোক্তি, গাড়িচালকদের সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অবাধ্য চালকদের উপরে সব সময়ে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। তবে প্রতিটি সেতুর আগে চালকদের হুঁশিয়ার করে বোর্ড লাগানো, রাস্তার দু’পাশে শক্তিশালী লোহার গার্ড লাগানোর মতো বেশ কিছু ব্যবস্থা যাতে নতুন করে নেওয়া যায়, তার জন্য নবান্নে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাথায় রেখে মদ খেয়ে গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, সিগন্যাল না-মানার মতো অনিয়মের ক্ষেত্রে চালকদের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রেও সেটা করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। শুধু কলকাতা নয়, এই ব্যবস্থা সারা রাজ্যে বলবৎ করা যায় কি না, সেটাও ভাবনাচিন্তার মধ্যে আছে বলে জানান এক পুলিশকর্তা।

এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষ এ দিন বিধানসভার অলিন্দে বলেন, ‘‘আমাদের কোনও বাসে কর্মরত অবস্থায় কোনও চালক মোবাইল নিয়ে উঠতে পারবেন না। এই মর্মে নির্দেশ জারি করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন