স্বপ্নভঙ্গ জুলেখার, ‘দিদিকে বলো’র নিদান ‘ধৈর্য ধরুন’

নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রথম ধাপেই ধাক্কা খেতে হল মুর্শিদাবাদের লালবাগের জুলেখা খাতুনকে।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:১৯
Share:

অভিভাবক সঞ্জয় মণ্ডলের সঙ্গে জুলেখা। —নিজস্ব চিত্র।

মেয়ের পণ, লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। বাড়ির লোকজনের পণ, তড়িঘড়ি মেয়ের বিয়ে দেওয়া।

Advertisement

শেষতক মেয়ের জেদের কাছে হার মানেন বাড়ির লোকজন। তবে মেয়ের আর বাড়িতে ঠাঁই হয়নি। বইখাতা নিয়ে তাঁকে আশ্রয় নিতে হয় স্কুলের জীবন বিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে।

মেয়ে কিন্তু তাঁর লক্ষ্যে স্থির। ইতিমধ্যে মাধ্যমিক, ৭৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে শিলায়ন হোমে থেকে তিনি এখন বহরমপুর গার্লস কলেজে দর্শন নিয়ে পড়ছেন।

Advertisement

তবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রথম ধাপেই ধাক্কা খেতে হল মুর্শিদাবাদের লালবাগের জুলেখা খাতুনকে। অভিযোগ, সরকারি কর্তাদের গাফিলতিতে জুলেখার সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হওয়া হল না। বাড়ি ছাড়ার পর থেকে জুলেখার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেন না তাঁর বাড়ির লোকজন। নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডলই বর্তমানে জুলেখার অভিভাবক।

সঞ্জয়ের অভিযোগ, ‘‘গত ২৬ অগস্ট সকালে হোম কর্তৃপক্ষ ফোন করে কৃষ্ণনগরে নার্সিং কলেজে কাউন্সেলিংয়ের জন্য জুলেখাকে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান। ওই দিন জুলেখাকে সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণনগরে গিয়ে জানতে পারি, ২৩ অগস্ট ওই কাউন্সেলিং শেষ হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি হোম কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদেরও জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।’’ প্রশাসনের তরফে কোনও সাড়া না পেয়ে ঘটনার পর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত ‘দিদিকে বলো’-তে তিন বার ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। সঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘শেষ বার ‘দিদিকে বলো’ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ‘ধৈর্য ধরুন’। কেউই কিছু করলেন না। মাঝখান থেকে মেয়েটার ফের এক বার স্বপ্নভঙ্গ হল!’’

জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিক আনন্দময় কোণার বলছেন, ‘‘কৃষ্ণনগর থেকে ২৫ অগস্ট আমাদের জানানো হয়। ২৬ অগস্ট জুলেখাকে কৃষ্ণনগরে পাঠানো হয়। ভুল যদি হয়ে থাকে, তা হলে কৃষ্ণনগর নার্সিং কলেজের ভুল। বিষয়টি জানিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনও উত্তর আসেনি।’’

ওই হোমের দায়িত্বে আছেন মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) অংশুল গুপ্তা। তিনি বলছেন, ‘‘জুলেখাকে দু’বার কৃষ্ণনগরে পাঠানো হয়েছিল।’’ যা শুনে আকাশ থেকে পড়ছেন সঞ্জয়। তিনি বলছেন, ‘‘জুলেখাকে নিয়ে তো এক বারই কৃষ্ণনগরে গিয়েছিলাম। জুলেখার ওবিসি-র শংসাপত্র আছে। হোমের জন্য দু’শতাংশ আসনও পূরণও হয়নি। সরকারের তরফে কেউ উদ্যোগী হলে মেয়েটা ভর্তি হতে পারত!’’

আর জুলেখার আফসোস, ‘‘নার্সিংয়ে ভর্তি হব বলে সেই কবে থেকে স্বপ্ন দেখছি। কেন যে আমার সঙ্গে এমনটা হল, কে জানে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন