tmc

শুভেন্দুদা-ই নেতা, বিদ্রোহ বিপ্লবের

পার্টি অফিস থেকে নিশ্চুপে প্রাক্তন হয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তার জায়গায় ধোপদুরস্ত অভিষেকের হাস্যমুখ। তবু, হাতেগোনা হলেও এর মধ্যেও ব্যতিক্রম রয়েছে। 

Advertisement

বিমান হাজরা 

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২০ ০২:৫০
Share:

আনারুল হক।

প্রশ্নটা সরাসরি না রাখলেও তৃণমূলের অন্দরে পারস্পারিক দেখা হলে, উত্তরটা মেপে নেওয়ার খেলা চলেছে— তুমি কোন দলে?

Advertisement

বিরোধীরা মনে করছেন, দলের অধিকাংশ অভিযোনশীল নেতা কর্মীরা উত্তরটা সরাসরি না দিলেও বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, জেলা এখন অভিষেকময়! তবু, তারই মধ্যে দু-এক জন যে বিরুদ্ধ স্রোতে ভেসে যাচ্ছেন না এমন নয়। তবে, সে তালিকা বড় ছোট।

মুর্শিদাবাদ জেলায় এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র হাওয়া। যুব নেতার মুখ আঁকা গেঞ্জি গলিয়ে জেলাময় মোটরবাইক হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। দলীয় ব্যানারে রাতারাতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক পাশেই জায়গা হয়ে গিয়েছে অভিযেকের। পার্টি অফিস থেকে নিশ্চুপে প্রাক্তন হয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তার জায়গায় ধোপদুরস্ত অভিষেকের হাস্যমুখ। তবু, হাতেগোনা হলেও এর মধ্যেও ব্যতিক্রম রয়েছে।

Advertisement

দলের এক দাপুটে জেলা নেতা বলছেন, ‘‘প্রাক্তনীর (পড়ুন শুভেন্দু অধিকারী) শিবিরে এখনও যে রয়ে গিয়েছেন সে কথা মুখে কবুল না করলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ইশারা অবশ্য দিয়ে চলেছেন কয়েকজন।’’ জেলা পরিষদের এক শীর্য পদাধিকারী তাই সামনে অভিষেক বন্দনা করলেও ফেসবুকে জেলার সদ্য-প্রাক্তন পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণমন্ত্রীর নামে জয়ধ্বনী দিতেও ভুল করছেন না। প্রশ্ন করলে ‘উত্তর দেব না’ বলে এড়িয়ে গেলেও তিনি যে জল মেপে পা ফেলার চেষ্টা করছেন বলাইবাহুল্য। তবে এ সব আড়াল-আবডালের তোয়াক্কা করছেন না এক জনই। শমসেরগঞ্জের তৃণমূল নেতা আনারুল হক। তাঁর ডাক নাম বিপ্লবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বুঝি খোলাখুলি বলছেন, ‘শুভেন্দুদাই আমার নেতা।’

শমসেরগঞ্জের ডাকাবুকো নেতা বিপ্লব কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্য থেকে যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৮ সালে তৃণমূলের হয়ে জেলা পরিষদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এখন তিনি জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ।

বিপ্লব সরাসরিই বলছেন— ‘‘আমার রাজনৈতিক উত্থানে সবটাই শুভেন্দু অধিকারীর অবদান।’’ তাঁর কাকা খলিলুর রহমানকে শমসেরগঞ্জ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে লোকসভায় জঙ্গিপুরে তৃণমূল প্রার্থী করার পিছনেও শুভেন্দুই কান্ডারী। তাই বিপ্লব বলছেন, ‘‘শুভেন্দুদাই আমার রাজনৈতিক গুরু, অভিভাবক এবং গাইড।’’ তাঁর প্রতিটি সভায় ফেস্টুন জুড়ে দলনেত্রীর পাশে শুভেন্দুর ছবি। বিপ্লবের দাবি, এই মুহূর্তে ধুলিয়ান পুরসভার অধিকাংশ কাউন্সিলর তাঁর অনুগামী এলাকার দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতেও তাঁর অনুগামীদেরই বিড়। স্পষ্ট বলছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশই আমার কাছে শেষ কথা। কিন্তু সবাই তো সে কথা ঢাক বাজিয়ে বলতে পারেন না। আমি পারি। তৃণমূলে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর শুভেন্দুদাই আমার নেতা। তাই আমার সভা সমিতিতে শুভেন্দুদার ছবি, শুভেন্দুদার কথা। প্রতি দিনই তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তিনি যে পথে বলবেন সে পথেই চলব আমি।’’ শমসেরগঞ্জে বিধায়ক আমিরুল ইসলাম ও বিপ্লবের অনুগতদের মধ্যে বিবাদ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই। দুই গোষ্ঠীর বিবাদে অনেকেই আহত হয়েছেন, জেলে গিয়েছেন। কিন্তু বিবাদ থামানো যায়নি। এত সবের মধ্যেও বিপ্লবের মাথা থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেননি শুভেন্দু। বরং দলের মধ্যে এত গোষ্ঠী বিবাদের পরও বিপ্লবের কাকা খলিলুর রহমানকেই জঙ্গিপুর থেকে প্রার্থী করে জিতিয়ে এনেছেন।

শুভেন্দুর পরিবর্তে জেলার দায়িত্ব এখন চার কো-অর্ডিনেটরের হাতে। তাঁদেরই অন্যতম খলিলুর। হ্যাঁ, তিনিও বলছেন, ‘‘আমি তৃণমূলে এসেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে। আমাকে দলে এনেছেন শুভেন্দু অধিকারী। স্বভাবতই দু’জনেই আমার কাছের লোক। তাই শুভেন্দুকে ভোলা সম্ভব নয়।’’ দলের এক নেতা বলছেন, ‘‘বদলে যাওয়া আবহে, কাকা-ভাইপোর দৌড় কত দূর— প্রশ্নটা করেও করা যাচ্ছে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement