শৈশব কেমন ছিল, জানা জরুরি

এমন হতে পারে তার বাবা-মায়ের মধ্যে নিয়মিত অশান্তি হত। হয়তো পারিবারিক কলহ ছিল। এ সব ক্ষেত্রে সন্তানেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।

Advertisement

কুণাল দে 

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২০
Share:

ধৃত: উৎপল বেহেরা

উৎপল বেহেরা ২১ বছরের এক যুবক, যে অবলীলায় বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি পাল-সহ তাঁদের ছ’বছরের সন্তানকে কুপিয়ে খুন করেছে। কিন্তু যেটা সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার যে, তিন-তিনটে খুন করার পরেও ওই যুবকের মধ্যে কোনও অনুতাপ নেই। এত বড় অপরাধ করার পরেও অনুতাপহীন থাকে কী ভাবে? কেন এমনটা হয়? বিষয়টি সাধারণ মানুষের জানা দরকার। উৎপলের মানসিকতা আমরা কেউ জানি না। কিন্তু আমার অনুমান, খোঁজ নিলে হয়তো জানা যাবে, তার বেড়ে ওঠার মধ্যে কোথাও খামতি ছিল। পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা হয়তো তার অনুকূল ছিল না।

Advertisement

এমন হতে পারে তার বাবা-মায়ের মধ্যে নিয়মিত অশান্তি হত। হয়তো পারিবারিক কলহ ছিল। এ সব ক্ষেত্রে সন্তানেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। ভেঙে যাওয়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এক ধরনের অপরাধপ্রবণতা কাজ করে। ছেলেবেলা থেকেই এই ধরনের ছেলেমেয়েদের মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা হতে থাকে। তা সে আপাত ভাবে উগ্র মেজাজ এবং উগ্র স্বভাবের না হলেও। এই ক্ষোভ তার পরিবারের প্রতি হতে পারে, সুনির্দিষ্ট মানুষের প্রতিও হতে পারে। সমাজের প্রতিও হতে পারে। এই পরিস্থিতি অনেক বাড়িতেই রয়েছে। সে সব ক্ষেত্রে সকলেই খুন-জখম করছে, তা তো নয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এখন যারা ওই অপরাধ করছেন, তাঁরা কোন শ্রেণির মধ্যে পড়ে?

যদি কোনও বড় অপরাধ কেউ করে তা হলে তার মধ্যে তিনটে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার ১) ইমপালসিভনেস অর্থাৎ সব ব্যাপারে তাঁরা প্রতিক্রিয়া দিয়ে থাকে। যেমন কোথাও কোনও দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, দাঙ্গা, মারপিটের ঘটনা ঘটলে, এক শ্রেণির মানুষ আছেন যাঁরা নীরবে সরে থাকেন, আবার কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা এগিয়ে যান এবং ঘটনার মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। ২) সাইকোপ্যাথ বা অপরাধপ্রবণ মন। এটাও থাকতে পারে তার মধ্যে। ৩) ইমোশন বা আবেগ থাকে বলেই আগে-পিছে ভাবে না বলেই তাঁদের মধ্যে অপরাধ করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মানুষ জন্মগত ভাবে অপরাধী হয়ে জন্মায় না—এটা ঠিক নয়। এটা আমাদের ভুল ধারণা। প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় অপরাধপ্রবণতা থাকে। তাই বলে সকলে তো খুন-জখম করছে না। উৎপল বেহেরা যা করতে, তা অনেকেই করতে পারে না। আবার কেউ কেউ আছে যারা নির্মম অপরাধ করে ফেলে। কিন্তু কেন এবং কেনই বা তারা সেই কাজ করতে পারে?

Advertisement

কোনও মানুষের মধ্যে ‘কনফ্লিক্ট অ্যান্ড কনসেন্স’ থাকলে তাঁরা অপরাধ করতে পারবেন না। তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং চেতনাবোধ কাজ করে বলেই তাঁরা পারেন না। আসলে তাঁরা ঘটনার পরের ঘটনা অর্থাৎ ঘটনার পরের পরিণতির কথা চিন্তা করতে পারেন বলেই কোনও অপরাধমূলক কাজ করা থেকে পিছিয়ে আসেন। এখন যাঁদের মধ্যে ওই দ্বন্দ্ব এবং চেতনাবোধ কাজ করে না, তাঁরা সহজেই যে কোনও ধরনের অপরাধ করে ফেলতে পারে। তবে উৎপল কিন্তু এক মাত্র ঘটনা নয়। এ রকম অজস্র ঘটনা ছড়িয়ে রয়েছে।

২০ বছর আগে হুগলি জেলার ঘটনা। সেই সময়ে ছেলেটির বয়স ছিল ৮ বছর বয়স। সহপাঠী তার কাছ থেকে বাদাম খাওয়ার জন্য ৫০ পয়সা ধার নিয়েছিল। কিন্তু সেই ৫০ পয়সা ফেরত না দেওয়ায় তাকে ইটভাটায় নিয়ে গিয়ে তাকে গর্তে ফেলে খুন করে। এমন ঘটনা আটকানো শুধু পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়, প্রশাসনের পক্ষেও সম্ভব নয়, স্কুলেও সম্ভব নয়। সামাজিক ভাবে মানুষকে সচেতন করার প্রয়োজন রয়েছে।

রাজ্য জুভেনাইল বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন