Nabanna

উন্নয়ন পর্ষদের অর্থ ফিরছে রাজকোষে

অর্থ দফতরের এই নির্দেশ রাজ্যের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০ ০৪:৫৫
Share:

ফাইল চিত্র।

স্বশাসন ছিল, অর্থ খরচের অবাধ ক্ষমতাও ছিল। এমন ১৮টি উন্নয়ন পর্ষদের ভাঁড়ারে পড়ে থাকা যাবতীয় অর্থ রাজকোষে জমা করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। গত ২৯ জুন অর্থ সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী নির্দেশ জারি করে জানিয়েছেন, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে উন্নয়ন পর্ষদগুলির তহবিলের সব অর্থ রাজকোষের(ট্রেজারি) সঙ্গে সংযুক্ত ডিপোজ়িট অ্যাকাউন্টে জমা করে দিতে হবে। এখানেই শেষ নয়, উন্নয়ন পর্ষদগুলি টাকা খরচ করতে চাইলে, তাদের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে অর্থ দফতরে আর্জি জানাতে হবে। খরচের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচ্য মনে হলে নবান্ন মঞ্জুর করবে।

Advertisement

অর্থ দফতরের এই নির্দেশ রাজ্যের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। নবান্নের একটি সূত্রের খবর, উন্নয়ন পর্ষদগুলির মাথায় বসে থাকা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ ‘স্বাধীনভাবে’ অর্থ খরচের ক্ষমতা ভোগ করছিলেন বলে শীর্ষস্তরে ধারণা তৈরি হয়েছিল। ফলে উন্নয়ন পর্ষদগুলি বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক ক্ষমতার ‘পরিপূরক’ কেন্দ্র হয়ে উঠছিল বলে মনে করা হচ্ছিল। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্ষদগুলিতে আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে অর্থ দফতরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে নবান্নের একাংশ দাবি করেছেন।

এক শীর্ষ অর্থ-কর্তার কথায়, ‘‘আর্থিক শৃঙ্খলা আনা জরুরি ছিল। সরাসরি ট্রেজারির অধীনে না থাকার ফলে অনেক পর্ষদই নিজেদের মতো টাকা খরচ করছিল। নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখছিল। এখন ট্রেজারি থেকেই সব টাকার উপর নজরদারি চলবে।’’ পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘উন্নয়ন পর্ষদগুলির হাতে খরচের ক্ষমতা থাকায় দ্রুত ও জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা যেত। এখন অর্থ দফতর নির্দেশ জারি করায় বিভাগীয় মন্ত্রী হিসাবে সময়মতো সকলের অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করছি।’’

Advertisement

উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করে এলাকার পরিকাঠামো নির্মাণের সূত্রপাত বাম জমানাতেই। কলকাতা পুর এলাকার বাইরে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য তৈরি হয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি(কেএমডিএ)। সেই পথেই হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ, আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদ, দিঘা-শঙ্করপুর, শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, কোনও পর্যটন কেন্দ্র বা শিল্প তালুকের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য পুর এলাকার বাইরে বৃহৎ এলাকাকে যুক্ত করে উন্নয়নের সামগ্রিক পরিকল্পনা করা। আর্থিক স্বাধীনতার পাশাপাশি প্রয়োজনে নিজস্ব তহবিল তৈরি এবং রোজগারের ব্যবস্থাও করতে পারত উন্নয়ন পর্ষদগুলি। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার পুর বাজেটের বড় অংশ উন্নয়ন পর্ষদে যায়। ফিরহাদ হাকিমের সভাপতিত্বে থাকা কেএমডিএ বছরে ২৫০ কোটি টাকা অনুদান পায়।

বছরে মোটা টাকা খরচ হয় শুভেন্দু অধিকারীর হাতে থাকা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ, শিশির অধিকারীর হাতে থাকা দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ, তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ, বিজয় বর্মনের নেতৃত্বে চলা শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদে। কেএমডিএ’র পর আর্থিকভাবে মজবুত হল হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। সূত্রের খবর, অর্থসচিব নির্দেশ জারি করে পর্ষদগুলির সমস্ত টাকা ফেরত দিতে বলেছিলেন। আগাম অনুমোদন ছাড়া খরচও করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু কেএমডিএ, এনকেডিএ, এইচডিএ-র কাজ তাতে প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড় হত। পরে ২ জুলাই আরও একটি নির্দেশ জারি করে দ্বিবেদী জানিয়েছেন, একবার সমস্ত অর্থ রাজকোষে জমা দেওয়ার পর পর্ষদগুলি মাসে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা খরচ করতে পারবে।

পর্ষদগুলির ফিক্সড ডিপোজ়িট ইত্যাদি থাকলেও তা সুদ পাওয়া যায় এমন ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। নিজস্ব কোনও তহবিল ধরে রাখতে পারবে না তারা। তবে কোনও পর্ষদের মাসিক প্রশাসনিক খরচ(যেমন-কেএমডিএ) মাসে ৫ কোটির বেশি হলে অনুমোদন দেওয়া হবে বলে অর্থসচিবের নির্দেশে বলা হয়েছে।

রাজ্যে উন্নয়ন পর্ষদের সংখ্যা এখন ১৮। ফুরফুরা শরিফ, তারকেশ্বর, বক্রেশ্বর, পাথরচাপড়ি, বর্ধমান, মেদিনীপুর-খড়গপুর, চ্যাঙড়াবান্দা, সাগর-বকখালি, মুকুটমনিপুর,জয়গাঁও উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি হয়েছে। যদিও সদ্য গঠিত পর্ষদগুলির কার্যকারিতা নিয়ে আমলাদের মনেই সংশয় রয়েছে। তাঁরা জানান, অধিকাংশ ছোট উন্নয়ন পর্ষদগুলির মাসে পাঁচ কোটি টাকা খরচের ক্ষমতা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন