৭৩৮টি সেতুর ভগ্নদশা, বেজায় অস্বস্তিতে নবান্ন

পূর্ত দফতরের খবর, মাঝেরহাটে সেতুভঙ্গের পরে সেতু নিয়ে সরকারের শিরঃপীড়ার শেষ নেই। বছরে চার বার পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে সব সেতু পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০৪:২৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

রাজ্যের পূর্ত দফতরের অধীনে ৫৯টি ডিভিশনে এখন ছোট-বড় সেতুর সংখ্যা ১৭৪৯। তার মধ্যে ৭৩৮টি সেতুর অবস্থা কমবেশি বিপজ্জনক। ৯৫টি সেতুর অবস্থা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এপ্রিলের শুরুতে বিভিন্ন ডিভিশন থেকে সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষার যে-রিপোর্ট জমা পড়েছে, তাতেই এই চিত্র ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্যপরীক্ষায় রাজ্যের ৪২% সেতুর ভগ্নদশা উঠে আসায় নবান্নের কর্তারা রীতিমতো অস্বস্তিতে। পূর্তকর্তারা জানাচ্ছেন, নবান্ন অতি দ্রুত অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং বিপজ্জনক সেতুগুলির মেরামতির পরিকল্পনা করছে।

Advertisement

পূর্ত দফতরের খবর, মাঝেরহাটে সেতুভঙ্গের পরে সেতু নিয়ে সরকারের শিরঃপীড়ার শেষ নেই। বছরে চার বার পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে সব সেতু পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা একটি ব্রিজ ডিরেক্টরেট তৈরির প্রস্তাবও বিবেচনাধীন। সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্ট বিশ্লেষণের আলাদা সমীক্ষা পোর্টাল তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে ১৭৪৯টি সেতুর মধ্যে মাত্র ৪০৭টির পরীক্ষা করতে পেরেছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। যে-সব সেতুর উপরে যথাযথ নজরদারি হয়নি, সেগুলির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন পূর্তসচিব।

পূর্ত দফতরের হিসেব অনুযায়ী, এপ্রিল পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্টে ১৭৪৯টি সেতুর মধ্যে ৯৫টি সেতুর অবস্থা অত্যন্ত বিপজ্জনক। ২৯৮টি সেতু বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ৪৭১টি সেতুও কোনও-না-কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সব মিলিয়ে ৭৩৮টি সেতুর স্বাস্থ্য-শুশ্রূষা দরকার। রাজ্যে এখল ১০১১টি সেতুর স্বাস্থ্য মোটের উপরে ভাল। সেগুলিতে এখনই কোনও মেরামতির প্রয়োজন নেই। এর বাইরে আছে বিভিন্ন রেলসেতু, যেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হয় রেল ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে।

Advertisement

নবান্নের এক পূর্তকর্তা বলেন, ‘‘এই প্রথম সেতুর অবস্থা নিয়ে সবিস্তার রিপোর্ট তৈরি হল। এত দিন তো নবান্নের কাছে কোনও খবরই ছিল না। বিভিন্ন স্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের সেতু সারানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ ওই কর্তা জানান, কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সেতুর ব্যাপারে রাজ্য স্তরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ৭৩৮টি সেতুর মেরামতি শেষ হওয়ার পরে রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ চালালেই হবে।

স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, পূর্ব বর্ধমানে ১৩৫টি সেতুর মধ্যে ৮৩টি, পূর্ব মেদিনীপুরে ৭২টি সেতুর মধ্যে ৪০টি, উত্তর দিনাজপুরের ৬৯টি সেতুর মধ্যে ৬২টি, আলিপুরদুয়ারের ৬৫টি সেতুর মধ্যে ৪২টি ‘স্বাস্থ্যবান’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে সব জেলাতেই অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং বিপজ্জনক সেতুর সংখ্যা কম নয়। কর্তাদের উদ্বেগ, মেরামতের আগেই কোথাও না আবার মাঝেরহাটের পুনরাবৃত্তি ঘটে! মাঝেরহাট সেতুর মেরামতি প্রয়োজন বলে পূর্ত দফতরে রিপোর্ট ছিল। কিন্তু সেতু সারাই করতে সাত মাস কেটে যায়। এই পরিস্থিতিতে চিহ্নিতকরণের পরে খারাপ সেতুগুলি যাতে যত দ্রুত সম্ভব মেরামত করা যায়, তা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও পূর্তসচিব অর্ণব রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন