তেরাত্রি পেরিয়ে স্বাধীন নদিয়া

চমকে উঠলেন নদিয়ার মানুষ। থমথমে সেই রাত শুধুই অজানা আশঙ্কার। ততক্ষণে র‍্যাডক্লিফ সাহেবের ভুলে উত্তাল হয়ে উঠেছে নদিয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩০
Share:

পতাকা হাতে বৃদ্ধারা। শিবনিবাসে। নিজস্ব চিত্র

অগস্ট ১৯৪৭। সন্ধেটা এমন হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু অল ইন্ডিয়া রেডিওর খবর হঠাৎ করেই বদলে দিল সব কিছু। প্রাক উৎসব সন্ধ্যা মুহূর্তে বদলে গেল এক বিষাদভরা রাতে। একটু আগেই রেডিও বার্তা জানিয়েছে নদিয়া জেলার বেশ খানিকটা অংশ স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। বরং তা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ বলে চিহ্নিত হয়েছে।

Advertisement

চমকে উঠলেন নদিয়ার মানুষ। থমথমে সেই রাত শুধুই অজানা আশঙ্কার। ততক্ষণে র‍্যাডক্লিফ সাহেবের ভুলে উত্তাল হয়ে উঠেছে নদিয়া। ম্যাপের উপর আঁচড় টানতে মারাত্মক ভুল করেছিলেন সাহেব। নদিয়া পাকিস্তানের অংশ, এই খবর রেডিওতে প্রচারিত হতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়ল নদিয়াবাসী। মিছিল, মিটিং, ধর্মঘট কিছুই বাকি রইল না। সক্রিয় হয়ে উঠলেন রানি জ্যোতির্ময়ী দেবী। চারদিকে বিশৃঙ্খলা। ইংরেজদের কাছে নদিয়ার নিরাপত্তা চাইলেন সৌরিশচন্দ্র। ফোর্ট উইলিয়াম থেকে রাতারাতি সেনা মোতায়েন করা হল। নাটকীয় ভাবে কাটল দু’দিন। শেষ পর্যন্ত মানচিত্রে বদল ঘটল। পিছিয়ে গেল র‍্যাডক্লিফ লাইন। সমগ্র নদিয়া অন্তর্ভুক্ত হল ভারতের। দুটি মূল্যবান দিন চরম অনিশ্চয়তায় কাটানোর পর জারি হল নতুন নির্দেশিকা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন নদিয়ার মানুষ। ১৮ অগস্ট। নদিয়ায় উড়ল তেরঙা জাতীয় পতাকা।

নদিয়ার যে অংশগুলি প্রথমে পাকিস্তানে পড়েছিল সেই সব অঞ্চলের মানুষ এখনও মনে করেন তাঁদের স্বাধীনতা দিবস ১৮ অগস্ট। শিবনিবাস, রানাঘাট বা শান্তিপুরের মতো জায়গায় দিনটি যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। রবিবার শিবনিবাসে পতাকা উত্তোলন থেকে নৌকা বাইচ, পদযাত্রা, বৃক্ষরোপণ বাদ যায়নি কিছুই।

Advertisement

এলাকার কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৪৭ সালের ১৮ অগস্ট ভোরে শান্তিপুরে তুলেছিলেন জাতীয় পতাকা। এ দিন শান্তিপুরের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ডাকঘর মোড়ে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে সেই জায়গাতেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দিনটি স্মরণ করেছে। এবার পতাকা উত্তোলন করেন নৃসিংহপুরের বাসিন্দা শতায়ু গঙ্গাধর বিশ্বাস। এলাকার বাসিন্দা অমিতাভ মিত্র জানান, তিনি নিজেই এ দিনের জন্য বিশেষ ব্যাজ তৈরি করেন। লেখা থাকে, ‘১৮ অগস্ট শান্তিপুরের স্বাধীনতা দিবস’। মাঝে শান্তিপুরের মানচিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন