পুড়ল তিনটে বাস, মৃত কর্মী

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথগঞ্জ শহরে ঢোকার মুখে জঙ্গিপুর পুরসভা নিয়ন্ত্রিত ওই বাসস্ট্যান্ডে বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ বাসে আগুন লাগে।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০৩:১০
Share:

আপ্রাণ: বালতির জলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন এক পুলিশকর্মী। বৃহস্পতিবার রাতে রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায় 

আগুনে পুড়ে গেল বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি বেসরকারি বাস। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন বাসে ঘুমিয়ে থাকা এক কর্মীও। দুলাল চক্রবর্তী (৪৩) নামে বাসের ওই খালাসির বাড়ি বীরভূমের মুরারইয়ের ভাদিশ্বরে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রঘুনাথগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের ঘটনা।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথগঞ্জ শহরে ঢোকার মুখে জঙ্গিপুর পুরসভা নিয়ন্ত্রিত ওই বাসস্ট্যান্ডে বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ বাসে আগুন লাগে। ঘটনার পরেই বাসের কর্মী, স্থানীয় লোকজন ও রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান। ধুলিয়ান দমকল কেন্দ্র থেকে ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পরে একটি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। কিন্তু তার আগেই তিনটি বাসই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এই বাসস্ট্যান্ডে প্রতি রাতেই ৬০ থেকে ৭০টি বেসরকারি বাস রাখা থাকে। বাসের কর্মীদের অনেকেই সেই বাসে ঘুমিয়েও থাকেন। তাঁদেরই এক জন বাসের কর্মী রজব শেখ। তাঁর বাড়ি সাগরদিঘির ফুলবাড়ি গ্রামে। রজব জানাচ্ছেন, রাত তখন প্রায় ১টা। বাইরে বাড়ি বলে তাঁরা বেশিরভাগ বাসকর্মী স্ট্যান্ডের রাখা বাসেই ঘুমোন। এ দিনও বাসে ঢুকে বিছানায় সবে শুয়েছেন। হঠাৎ দেখেন, স্ট্যান্ডের গেটের মুখে একটি বাসে আগুন জ্বলছে। স্ট্যান্ডে তখন প্রায় ৬০-৭০টি বাস। সব বাস রাখা আছে প্রতিটি বাসের সঙ্গে গা ঘেঁষে। আগুন দেখে সকলেই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন। জ্বলন্ত বাস-সহ আশপাশের সব বাসগুলি লক করা রয়েছে। যদি কেউ ভিতরে ঘুমিয়ে থাকে ভেবে বাসের গায়ে জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করতে শুরু করেন সকলেই। ইতিমধ্যেই আগুন পরের বাসটিকেও ছুঁয়ে ফেলেছে। জোরে শব্দ করে টায়ারও ফাটছে। তখন খালাসি ও চালকেরা মিলে আশপাশের বেশ কিছু বাসকে পিছন দিক দিয়ে কোনও রকমে স্ট্যান্ড থেকে বার করে এনে রাস্তার উপর দাঁড় করানো হয়। কিন্তু জ্বলন্ত বাসগুলির কাছে যাওয়া যাচ্ছিল না কিছুতেই।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বাসের এক কন্ডাক্টর আমিরুল মোল্লা বলেন, “পূর্ব দিকের গেটে তখন আমরা মাত্র তিন জন। প্রথমেই আমি ধুলিয়ান দমকলে ফোন করি। কিন্তু তাদের ফোনে কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে আমার বাস মালিককে ফোন করি। তিনি তখন ফোন করেন বহরমপুর দমকলে। কোনও রকমে অন্য একটি বাসের চালককে নিয়ে এসে আটটি বাসকে রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হয়।”

ততক্ষণে রঘুনাথগঞ্জ থানা থেকে পুলিশও চলে এসেছে। এ দিকে, বাসস্ট্যান্ডের কোথাও সামান্য জলের ব্যবস্থাও নেই। ঘটনাস্থলে আসেন বাস শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক ফুরকান শেখ। তাঁর ছেলের হোটেলের কর্মচারীদের ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। হোটেলের এক কর্মী মনোজ কুণ্ডু জানান, মালিক এসে ডাকতেই ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে গিয়ে দেখেন, দাউদাউ করে জ্বলছে বাস। সঙ্গে সঙ্গে পাম্প চালিয়ে পাইপের সাহায্যে দোতলার হোটেল থেকে পাইপ লাগিয়ে জল দেওয়া শুরু হয়। দিয়ে দেওয়া হয় হোটেলের সমস্ত বালতি। সেই বালতিতে করেই জল ছড়ানো শুরু হয় আগুনে।

আগুন তখন তৃতীয় বাস ছাড়িয়ে আরও দুটি বাসে ধরে গিয়েছে। উপস্থিত বাস চালকেরা ঝুঁকি নিয়েই সেই বাস দু’টিকে বের করবেন কি না ভাবছেন। ঠিক তখনই ওই এলাকার একটি পেট্রল পাম্পে তেল নিয়ে আসেন এক ট্যাঙ্কার চালক। আগুন লেগেছে শুনে বাসস্ট্যান্ডে ছুটে আসেন তিনিও। বহরমপুরের সেই চালক তখন জ্বলতে থাকা একটি বাসে উঠে পড়েন। সেটিকে বের করে আরও দুটি জ্বলন্ত বাসকে ঝুঁকি নিয়ে আগুনের থেকে দূরে সরিয়ে আনেন।

ধুলিয়ান দমকলের আধিকারিক সেলিম শেখ বলছেন, ‘‘বাসের ব্যাটারি চালু ছিল। তখনই কোনও ভাবে পাইপ বেয়ে ডিজেল লিক করে শর্ট সার্কিট হয়ে বাসে আগুন লেগেছে বলে ভাবে মনে হয়েছে। বাসের সিটে ছোবড়া ও স্পঞ্জ থাকায় আগুনের মাত্রা বেড়েছে। হাওয়া থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে।

মৃত ওই খালাসির দাদা তপন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘দীর্ঘ দিন থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাসে খালাসির কাজ করত ভাই। বাবা, মা নেই। নিজেও বিয়ে করেনি। বাড়িতে যাতায়াত ছিল খুব কম। বাসেই থাকত সব সময়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন