পাড়ারই পরিচিত এক যুবকের ডাকে ভরসন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কলেজ পড়ুয়া সনৎ মণ্ডল (২০)। রবিবার বেশ রাতের দিকে খবরটা এসেছিল ফোনেই—‘সনৎ আর বেঁচে নেই’। সনৎ যাঁর ডাকে বেরিয়েছিলেন, সেই বাহারুল মণ্ডলের দাবি, দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন সনৎ। কিন্তু সনতের বাড়ির লোকের অভিযোগ, দুর্ঘটনা নয়, সনৎকে খুন করা হয়েছে।
অভিযোগ, সোমবার সন্ধ্যায় সনতের বাড়ির লোকজন ধানতলা থানায় অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে শুনতে হয়, ‘এ তো হাঁসখালির কেস। ওখানে যান।’ আর হাঁসখালি থানার পুলিশ জানিয়ে দেয়, যে থানা এলাকায় বাড়ি সেখানেই অভিযোগ জানাতে হবে। শেষ পর্যন্ত কোনও থানাতেই অভিযোগ নেয়নি। তারই প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বাড়ির পাশেই রেখে দেওয়া হয়েছিল সনতের দেহ। শেষতক, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযোগ নিলে তার পরে দেহ দাহ করা হয়।
নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, পথ দুর্ঘটনায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোটা বিষয়টিই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ কিন্তু পুলিশ কেন অভিযোগ নিল না? পুলিশ সুপারের দাবি, পুলিশ তো অভিযোগ নিয়েছে। কিন্তু সেই অভিযোগ নিতে চব্বিশ ঘণ্টা লেগে গেল কেন, তার অবশ্য সদুত্তর মেলেনি। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ধানতলার হাজরাপুরের বাসিন্দা সনৎ বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। রবিবার সন্ধ্যায় বাহারুল মণ্ডল নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে বাইকে বেরিয়ে যান সনৎ। বাহারুল বাইক চালাচ্ছিলেন। তাঁর মাথায় হেলমেটও থাকলেও সনতের মাথা ফাঁকা ছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাঁসখালির ভবানীপুর বাজারে একটি অটোকে রাস্তা দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইকটি উল্টে যায়। পড়ে গিয়ে দু’জনেই সংজ্ঞা হারান। তাঁদের বগুলা হাসপাতালে নিয়ে যান এলাকার লোকজন। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের পরে সোমবার সন্ধ্যায় বাড়িতে দেহ এলে সন্দেহ হয় বাড়ির লোকজনের।
সনতের দিদি প্রণতি মণ্ডল অভিযোগ জানিয়েছেন, “ভাইকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে বাহারুল। দেহের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই দেহ বাড়ির পাশে রেখে দেওয়া হয়েছিল।” আর বাহারুলের দাবি, “আমি কেন ওকে খুন করব? আমি আর সনৎ মাঝেমধ্যেই বাইকে ঘুরতে বেরোতাম। এটা একেবারেই দুর্ঘটনা। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।”
সনতের পড়শিরা বলছেন, ‘‘অভাবের সংসারে খুব কষ্ট করেই ছেলেটি লেখাপড়া করছিল। কী করে যে এমনটা ঘটে গেল, পুলিশ তদন্ত করে বের করুক। চোখের সামনে ছেলেটার দেহ পড়ে থাকল এতক্ষণ! তার পরেই তো টনক নড়ল পুলিশের।’’