ভিন্ রাজ্যে কাজে ৩ হাজার নাবালক

সেই মত গত নভেম্বরে যে পরিসংখ্যান তৈরি হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে প্রায় তিন হাজার মানুষ বাইরের রাজ্যে কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়াও ওই পরিসংখ্যান সংগ্রহের সময়ে প্রশাসন জানতে পেরেছে—ভিন রাজ্যে কর্মরত ১৪ বছর বয়সী নাবালক রয়েছে।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:২০
Share:

—ফাইল চিত্র।

আলোচনা শুরু হয়েছিল কেরলের বন্যার পরেই। সেই সময়ে মুর্শিদাবাদের কত জন বন্যার কবলে পড়ে কেরলে আটকে রয়েছেন, তথ্য না থাকার কারণে তা জানতে পারেনি জেলাপ্রশাসন। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল কর্তাদের। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে জেলার কত জন শ্রমিক ভিন রাজ্যে কর্মরত রয়েছেন, তা জানতে পরিসংখ্যান তৈরির কাজ শুরু করে জে‌লা প্রশাসন।

Advertisement

সেই মত গত নভেম্বরে যে পরিসংখ্যান তৈরি হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে প্রায় তিন হাজার মানুষ বাইরের রাজ্যে কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়াও ওই পরিসংখ্যান সংগ্রহের সময়ে প্রশাসন জানতে পেরেছে—ভিন রাজ্যে কর্মরত ১৪ বছর বয়সী নাবালক রয়েছে। তার থেকে কম বয়সীরাও কাজে গিয়েছে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে। সেই সমস্ত পরিবারগুলিকে প্রশাসন বিভিন্ন ভাবে সচেতন করার কাজ করছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলডাঙা ১ ব্লকে রয়েছে ১৩টি পঞ্চায়েত। সেখানে ৩টি বিধানসভা ক্ষেত্র রয়েছে। বেলডাঙা, রেজিনগর ও নওদা। এই তিন বিধানসভা মিলে মোট পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২৮১২ জন। বেলডাঙা বিধা‌নসভা ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা ১৭৩৭ জন পুরুষ। মহিলার সংখ্যা ৭১ জন। রেজিনগর বিধানসভা পুরুষ ৫৬২ জন ও মহিলা ৬ জন। নওদায় সেই সংখ্যা ৪১০ জন ও মহিলা ২৬ জন।

প্রশাসন জানতে পেরেছে, মূলত রাজমিস্ত্রির কাজে যান পুরুষরা। সেই সঙ্গে অনান্য শ্রমিকের কাজও করেন। কেউ বাস চালান, কেউ ভাড়ার অটো চালান, কেউ দোকা‌নে কাজ করেন। মহিলারা বিশেষত বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করার জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন। কেউ কেউ আবার ফেরিওয়ালার কাজও করেন। ওই পরিসংখ্যানের খুঁটিনাটি জানতে প্রতি বাড়ি ঘোরেন বেলডাঙা ১ ব্লকের কর্মীরা। তাঁরা বিভিন্ন প্রশ্ন করে জানতে পারেন যে— বাড়ির সদস্যরা বাইরে আছে। তাদের অনেকের বয়স ১৮ বছরের কম। ওই নাবালকের অভিভাবকেরা জানান, আর্থিক সচ্ছ্বলতার জন্যই তাদের বাড়ির বাইরে পাঠানো হয়েছে। অর্থনৈতিক কারণে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে পারেন না। তাই তারা বাড়ির বড়দের সঙ্গে পাঠান হয়েছে। তারাও সেখানে গিয়ে কাজ করছে। বেলডাঙা ও নওদার একাংশ শ্রমিক পরিবার জানাচ্ছেন, তারা নানা সমস্যার মধ্যে বাইরের রাজ্যে আছেন। কারণ বাঙলাভাষীদের সেখানে বাংলাদেশি হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। শ্রমিকদের মধ্যে অনেকের কাছে ভোটের পরিচয়পত্র নেই। তাদের অবস্থা আরও খারাপ। যাদের পরিচয় পত্র হয়নি তাদের মধ্যে ১৮ বছরের নিচে থাকা নাবালক শ্রমিকের পরিবারকে প্রশাসন সচেতন করেছে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘যে বালক ১৪ বা ১৬ বছর বয়সে বেঙ্গালুরু গিয়েছে, সে টানা সেখানে থাকলে তার ভোটার কার্ড তৈরি হচ্ছে না। কারণ বিধানসভা এলাকায় না থাকলে ভোটার তালিকায় নামও উঠছে না। ফলে সকলেই সমস্যায় পড়ছে।’’

Advertisement

বেলডাঙা ১-এর বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্র বলেন, ‘‘ভিন রাজ্যে কর্মরত ১৮ বছর বয়সীদের একটা পরিসংখ্যান আমরা পেয়েছি। এই সংখ্যা ২৮১২ জন। সঙ্গে আমরা শারীরিক ভাবে অক্ষম মানুষের পরিসংখ্যানও তৈরি করেছি। এই সংখ্যা ১৬১৯ জন। এই পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে জানতে পেরেছি ১৮ বছরের নীচের নাবালকরাও বাইরের রাজ্যে কাজে গিয়েছে। তাদের মূল স্রোতে ফেরানোর কথাও বলা হয়েছে। একটি ছেলে কাজ ছেড়ে পড়াশুনো শুরু করলে প্রশাসন তার পাশে থাকবে। তাকে আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন