হেলমেট না-পরার মাসুল দিলেন দুই ভাই

শমসেরগঞ্জের বাসুদেবপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ দুর্ঘটনায় মারা যান অলিউল মোমিন (২৩) ও রহিম মোমিন (২০)। তাঁদের বাড়ি মধ্য চাচণ্ড গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

মুর্শিদাবাদ শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০২
Share:

বেলডাঙায় লরির নীচে মোটরবাইক, ইনসেটে জখম অরিজিৎ বিশ্বাস।

‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’, ‘নো হেলমেট, নো পেট্রল’, পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ— প্রচার এবং সচেতনতাও চলছে। বিরাম নেই দুর্ঘটনারও। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত শমসেরগঞ্জ, বেলডাঙা, ভরতপুর ও আহিরণে চারটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। শিশু ও মহিলা-সহ জখম অন্তত দশ জন।

Advertisement

৩১ ডিসেম্বর বহরমপুরে মোটরবাইকের চালক ও আরোহীদের হেলমেট পরার বার্তা দিতে বহরমপুরে পথে নেমেছিলেন ‘যমরাজ’। পয়লা জানুয়ারি ওই একই বার্তা দিতে ফুলতলাকে বেছে নিয়েছিল রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ। মঙ্গলবার তার কয়েক ঘণ্টা পরেই হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর খেসারত দিতে হল দুই ভাইকে। শমসেরগঞ্জের বাসুদেবপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ দুর্ঘটনায় মারা যান অলিউল মোমিন (২৩) ও রহিম মোমিন (২০)। তাঁদের বাড়ি মধ্য চাচণ্ড গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না।

অরঙ্গাবাদ থেকে সাজুর মোড় হয়ে বাইকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছিেলন তাঁরা। গাড়ি চালাচ্ছিলেন অলিউল। বাসুদেবপুরে পিছন থেকে একটি গাড়ি তাঁদের ধাক্কা মারলে রাস্তায় ছিটকে পড়েন দু’জনেই। তাঁদের জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মারা যান রহিম। অলিউল মারা যান মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

Advertisement

জীবনে প্রথম দিন স্কুলে যাবে ছেলে। বুধবার সকাল থেকে বাড়িতে তাই ব্যস্ততার অন্ত ছিল না। শেষ পর্যন্ত টিফিন-বক্স, জলের বোতল, বইয়ের ব্যাগ গুছিয়ে বাবার সঙ্গে মোটরবাইকে উঠে বসেছিল সাড়ে তিন বছরের অরিজিৎ বিশ্বাস। সঙ্গে ছিল দিদি তিয়াষাও। গন্তব্য ছিল বেলডাঙার প্রণব ভারতী স্কুল। কিন্তু স্কুলে পৌঁছনোর আগেই বেলডাঙা-আমতলা রাজ্য সড়কে ছাপাখানা মোড়ে দুর্ঘটনায় তিয়াষা রক্ষা পেলেও গুরুতর জখম হয়েছেন অরিজিৎ ও তার বাবা অখিল বিশ্বাস। তাঁরা দু’জনেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবার রাত পর্যন্ত আতঙ্ক কাটেনি তিয়াষার।

ছাপাখানা চৌরাস্তার মোড় এমনিতেই জমজমাট এলাকা। গাড়ির ভিড়ও থাকে। এ দিন, সেই পথ দিয়েই দুই খুদেকে নিয়ে বাইক চালাচ্ছিলেন অখিল। একটি লরি তাঁদের পিছনে যাচ্ছিল। আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেই লরির সামনেই পড়ে যান তিন জনেই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লরির গতি কম ছিল তাই রক্ষে। নইলে আরও বড় বিপদ ঘটত। দুর্ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন রাস্তাও অবরোধ করেন কিছুক্ষণ। বেলডাঙা-আমতলা সড়কে আটকে পড়ে প্রচুর বাস, লরি, ট্রেকার। হয়রান হতে হয় বহু যাত্রীকে। পরে পুলিশ এসে অবরোধ তুলে দেয়।

এ দিকে, বুধবার সকালে অ্যাম্বুল্যান্সে সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন এক মহিলা। সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিজনেরা। কান্দি-সালার রাজ্য সড়কে ভরতপুরের গাঙেড্ডা মোড়ে বেসরকারি বাসের ধাক্কায় অ্যাম্বুল্যান্সটি রাস্তার পাশে নয়ানজুলিতে উল্টে যায়। ওই ঘটনায় সদ্যোজাত শিশু, চার মহিলা-সহ মোট সাত জন জখম হয়েছেন। তাঁরা সকলেই কান্দি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন কান্দি মহকুমা হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্সটি ভরতপুরের ভালুইপাড়া যাচ্ছিল। সেই সময় সালারের দিক থেকে যাত্রীবোঝাই একটি বাস কান্দির দিকে আসছিল। গাঙেড্ডা মোড়ে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টো দিক থেকে আসা ওই অ্যাম্বুল্যান্সে ধাক্কা মারে।

অ্যাম্বুল্যান্সের চালক আশিস মণ্ডল বলেন, “কান্দি-সালার রাজ্য সড়কে অনেকগুলো বাঁক রয়েছে। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো যায় না। দুর্ঘটনাস্থলেও একটি বড় বাঁক আছে। আমার গাড়ির গতিও কম ছিল। আচমকা বাসটি এসে অ্যাম্বুল্যান্সে ধাক্কা মেরে নয়ানজুলিতে ফেলে দেয়।’’ প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বাসটির সামনের চাকা ফেটে গিয়েই এমন বিপত্তি।

এ দিন সকালে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি ট্যাঙ্কার উল্টে জখম হয়েছেন নূরপুরের এক বাসিন্দা। সকালে বাসযাত্রী প্রতীক্ষালয়ে তেমন লোকজন ও টোটোর ভিড় না থাকায় বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল আহিরণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন