কোঁচড় ঢেলে দিলেন হাসিনা

আদালতে বিচার চাইতে আসা হতদরিদ্র, নিরক্ষর, হাসিনা বেওয়া মাইকে থেকে ভেসে আসা কথার স্রোতে চলে গিয়েছিলেন টিভির পর্দায় ভেসে ওঠা দৃশ্যের ভিতরে

Advertisement

অনল আবেদিন 

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৭
Share:

হাসিনা বেওয়া। নিজস্ব চিত্র

বিচার চাওয়ার জেরে তিন দশক ধরে অতিচেনা বহরমপুর আদালতটা সে দিন কেমন যেন অচেনা ঠেকছিল তাঁর। আদালত চত্বরে উকিলসভার কার্যালয়ের সামনের অস্থায়ী মঞ্চের উপরে রাখা একটি টেবিল সাদা চাদর দিয়ে মোড়া। সেই টেবিলের চারপাশে কালো কোট গায়ে থিকথিক করছে কালো মাথার ভিড়। সেই ভিড়ে ছিলেন জেলাশাসক, সপার্ষদ জেলা জজ, জেলা পুলিশ সুপার ও দুঁদে আইনজীবী সকলেই।

Advertisement

নিত্যদিনের নিয়মিত বিচারকার্যের বদলে সেদিনের (২৭ অগস্ট) ওই জটলা থেকে মাইকে ঘোষণা চলছে, ‘‘কেরলের বন্যার্দের ত্রাণ তহবিলে জেলাশাসক ও জেলার পুলিশ সুপার দিলেন ১০ হাজার করে টাকা, বিচারকেরা দিলেন ২২ হাজার টাকা, বহরমপুর পুরপ্রধান দিলেন এক লক্ষ টাকা...’’। আদালতে বিচার চাইতে আসা হতদরিদ্র, নিরক্ষর, হাসিনা বেওয়া মাইকে থেকে ভেসে আসা কথার স্রোতে চলে গিয়েছিলেন টিভির পর্দায় ভেসে ওঠা দৃশ্যের ভিতরে। তাঁর মনে ভেসে ওঠে কেরলের বন্যার্ত মহিলাদেরকে জুতো পায়ে ত্রাণের বোটে ওঠার জন্য জলে হামাগুড়ি দেওয়া এক যুবকের পিঠ পেতে দেওয়ার দৃশ্য। তিনি আর বিলম্ব করেননি। বছর বাহান্নোর ওই প্রৌঢ়া সোজা ভিড় ঢেলে টেবিলের সামনে গিয়ে ২টি একশো টাকা নোট বাডিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘বাবারা! আমার কাছে আর নেই! এই সমান্য টাকাটা তোমরা কেরলের বানভাসি মানুষের কাছে পাঠিয়ে দেবে!’’

সবাই হতবাক। আবেগ অপ্পুত কণ্ঠে জেলাশাসক মাইকে ঘোষণা করেন, ‘‘ওই মহিলা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন।’’ বিচারক থেকে শুরু করে আইনজীবর দল-সহ সবাই তুমুল হর্ষধ্বনিতে সম্মান জানান ওই ‘দয়াময়ী’কে। কিন্তু ফেরার পথে, হাসিনা দেখলেন, নাহ তাঁর গ্রামে ফেরার বাস ভাড়াটুকুও নেই!

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন