খুনি কে? পুলিশ কুয়াশায়

পাতায় ঢাকা বালিকার দেহ

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বাবা দেখেন, সুফিয়ার বোন এবং দাদা বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু, তার কোনও খোঁজ নেই। রাতভর খোঁজ মেলেনি এক রত্তি মেয়েটির। রবিবার সকালে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি বাগানের মধ্যে মিলল শীর্ণকায় বালিকার দেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:১৫
Share:

মা জেলে বন্দি। বাবা কোনও রকমে রান্নাবান্না করে খাওয়ান ছয় ছেলে-মেয়েকে। শনিবার সকালে বাবা গিয়েছিলেন জেলে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। বছর সাতেকের সুফিয়া খাতুনের উপর ভার পড়েছিল অন্য দুই ভাই-বোনের সঙ্গে ছাগলের জন্য কাঠাল পাতা নিয়ে আসা।

Advertisement

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বাবা দেখেন, সুফিয়ার বোন এবং দাদা বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু, তার কোনও খোঁজ নেই। রাতভর খোঁজ মেলেনি এক রত্তি মেয়েটির। রবিবার সকালে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি বাগানের মধ্যে মিলল শীর্ণকায় বালিকার দেহ। কাঠাল পাতা দিয়ে ঢাকা ছিল তা। তার বুকে ছিল ক্ষতচিহ্ন। বোনের দেহ মেলার পর থেকেই বেপাত্তা তার দাদা বাদশা শেখ। পুলিশ তো বটেই স্থানীয়দেরও সন্দেহ গিয়ে পড়েছে বাদশার উপর। কেন খুন, তা জানা যায়নি। ডোমকল বর্তমানাবাদ এলাকার ঘটনা।

বর্তমানাবাদের রেজাবুল সেখের তিন মেয়ে তিন ছেলে। স্ত্রী ১৩ বছর আগের একটি খুনের ঘটনায় তিনমাস আগে জেলে গিয়েছে। রেজাবুল জানায়, শনিবার স্ত্রীর সঙ্গে বহরমপুর জেলে দেখা করতে গিয়েছিল সে। বাড়ি ফিরে সুফিয়াকে দেখতে না পেয়ে ছেলে বাদশা ও মেয়ে সাবিনার কাছে জানতে চান। রেজাবুলের কথায়, ‘‘ওরা বলেছিল কাঠালের পাতা পেড়ে ওদের সেগুলো নিয়ে বাড়ি যেতে বলেছিল সুফিয়া। নিজে আরও কিছু পাতা নিয়ে পরে বাড়ি ফিরবে বলে জানিয়েছিল সে। কিন্তু তার পরে আর সে ফেরেনি।’’

Advertisement

তার পরেই খোঁজ শুরু হয় সুফিয়ার। রাতেও ওই বাগানে খোঁজ চালানো হয়। কিন্তু দেহটি পাতায় ঢাকা থাকায় রাতের আঁধারে কিছু বোঝা যায়নি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ফের সকালে খোঁজ শুরু হয়। সুফিয়ার দাদা বাদশাই প্রথম পাতায় ঢাকা দেহটি দেখতে পায়। সবাই তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই ফাঁকে গা ঢাকা দেয় বাদশা। পরে বাদশার খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায় সে নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাদশা প্রথম সুফিয়ার দেহ দেখতে পায় বলে আমাদের কোনও সন্দেহ হয়নি। কিন্তু কেন সে বোনের সঙ্গে বাড়ি ফেরেনি, তা জানতে চাওয়ার জন্য বাদশার খোঁজ পড়ে। তখন দেখা যায় সে উধাও।

পুলিশ সুফিয়ার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘সুফিয়ার বুকে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমাদেরও অনুমান, তার দাদাকে খুঁজে পেলে পুরো ঘটনা জানা সম্ভব হবে। তার পালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই হয়তো রয়েছে খুনের সূত্র।’’

সুফিয়া-বাদশার সঙ্গে বাগানে গিয়েছিল তাদের পাঁচ বছরের বোন সাবিনা। সে পুলিশকে জানিয়েছে, বাগান থেকে সে আগেই পাতা নিয়ে বাড়ি ফেরে। স্থানীয়দের ধারণা, বাদশা-সুফিয়ার মধ্যে সম্ভবত কোনও গোলমাল হয়। হয়তো সেই কারণেই, এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন