মাছ নয়, কোঁচ এসে বিঁধল ভাইয়ের গায়ে

চোখের সামনেই পিঠে-হাতে কোঁচ বিঁধে মাছের মতোই ছটফট শুরু করেছিল শুভঙ্কর। প্রথমটায় হকচকিয়ে গেলেও পরে ভয় পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল রাজেশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

বিদ্ধ: কোঁচ বেঁধা অবস্থায় হাসপাতালে শুভঙ্কর। নিজস্ব চিত্র।

হাঁটু জলের অঞ্জনা নদীতে মাছের খোঁজে নেমেছিল দুই ভাই। হাতে কোঁচ, মাছ নজরে এলেই গেঁথে ফেলবে। বুধবার সকালে, জল দাপিয়ে খান কয়েক মাছ গেঁথে তোলার ফাঁকে পাথরে লেগে বেঁকে গিয়েছিল পাঁচ ফলার সেই কোঁচ। ‘বাঁকিয়ে দিলি কেন?’ ঝগড়া শুরু হয়েছিল, সপ্তম আর আষ্টম শ্রেণির, সম্পর্কে দুই ভাই, শুভঙ্কর মণ্ডল আর রাজেশ দুর্লভের। খেপে গিয়ে রাজেশ তার হাতের কোঁচটাই ছুঁড়ে মেরেছিল শুভঙ্করকে। লাট খেয়ে কোঁচটা ছুটে গিয়েছিল শুভঙ্করের দিকে। আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই, সটান তা গেঁথে ফেলেছিল তাকে।

Advertisement

চোখের সামনেই পিঠে-হাতে কোঁচ বিঁধে মাছের মতোই ছটফট শুরু করেছিল শুভঙ্কর। প্রথমটায় হকচকিয়ে গেলেও পরে ভয় পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল রাজেশ। আশপাশের লোকজন ওই অবস্থাতেই তাকে নিয়ে ছুটেছিল কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে। অবিরল রক্তপাতে বছর বারোর ছেলেটা তখন নেতিয়ে পড়েছে। অবস্থা এমন, তাকে যে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হবে এমনও সম্ভব নয়। কারণ, অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যেতে গেলে রাস্তায় যে ঝাঁকুনি হবে তাতে রক্তক্ষরণ বেড়ে পথেই মৃত্যু হতে পারে তার। তা হলে উপায়? এগিয়ে এসেছিলেন জেলা হাসপাতালের দুই চিকিৎসক, প্রণব ঘোষ আর অঞ্জন সেনগুপ্ত।

প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে অস্ত্রোপচারে প্রায় ফুসফুস ছুঁয়ে যাওয়া সেই কোঁচ বের করে সপ্তম শ্রেণির ছেলেটাকে বিপদ মুক্ত করেন তাঁরা। প্রণববাবু বলেন, ‘‘কোঁচের একটা ফলা ছেলেটির বাম দিকের ফুসফুস প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল।’’ তিনি মনে করেন, আর একটু দেরি হলে ছেলেটির প্রাণ সংশয় হত।

Advertisement

হাসপাতালে বসে শুভঙ্করের বাবা সুভাষ মন্ডল তাই বলেন, “গেঞ্জির কারখানায় কাজ করি, কোনওরকমে সংসারটা চলে। কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে হলে হয়ত পারতামই না। ওই চিকিৎসকদের কাছে তাই চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব আমি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন