এক বাসকর্মীর তৎপরতায় উদ্ধার হল এক অপহৃত নাবালিকা। শনিবার সকালে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডে কলকাতাগামী একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে ভগবানগোলা থানার পুলিশ। সেই সঙ্গে অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে বিলকিশা খাতুন নামে এক তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আয়ুব শেখ নামে এক ব্যক্তিকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাকে জেরা করে বিলকিশার সন্ধান মেলে।
ভগবানগোলা থানার ওসি সমিত তালুকদার জানান, এ দিন কলকাতা যাবার জন্য বছর নয়েকের এক নাবালিকাকে নিয়ে এক তরুণীকে বহরমপুর–কলকাতাগামী বাসে উঠতে দেখে এক বাসকর্মীর সন্দেহ হয়। তিনি থানায় ফোন করে বিষয়টি জানান। কৌশলে বাসটিকে আটকে রেখে ওই বাসকর্মী পুলিশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। পুলিশ এসে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করে বিলকিশাকে। শনিবার দুপুরেই ওই নাবালিকাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রবিবার লালবাগ মহকুমা আদালতে এক বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার জন্য পাঠানো হবে।
অপহৃতা ওই নাবালিকা রানিতলা থানা এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সে। তার বাবা জানান, বড় দিদি ও পরিবারের অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে মঙ্গলবার পলাশবাড়ি গ্রামে এক আত্মীয়ের বিয়ে বাড়িতে যায় সে। দুপুর সাড়ে ১১টা নাগাদ তার দিদি খেয়াল করেন ওই নাবালিকা আশেপাশে কোথাও নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঘটনার কথা জানিয়ে সে দিনই ভগবানগোলা থানায় অভিযোগ করেন ওই নাবালিকার বাবা। তার খোঁজে গত তিনদিন ধরে ভগবানগোলা থানার ওসি সমিত তালুকদারের নেতৃত্বে আশপাশে সমস্ত এলাকার রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে নজরদারি শুরু করে পুলিশ। নজরদারি চালাতে সাহায্য নেওয়া হয় ট্রেনের হকার ও বাস কর্মীদেরও।
তদন্তে নেমে স্থানীয় লোকজনের কথা বলে পুলিশের হাতে যে তথ্য আসে, তাতে সন্দেহের তীর গিয়ে পড়ে খুদগিরিয়া খাসপাড়া গ্রামের বিলকিশা খাতুনের উপর। বুধবারই তার বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। বিলকিশাকে না পেয়ে তার কাকা আয়ুব শেখকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জেরায় আয়ুব অপহরণের কথা স্বীকার করে। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আয়ুবের কথায় পুলিশ নিশ্চিত হয় অপহৃত বালিকাকে নিয়ে বহরমপুরেই রয়েছে বিলকিশা।
ওই নাবালিকার কথায়, ‘‘কিছু বলতে গেলেই আমার মুখ চেপে ধরে চুলির মুঠি ধরে মারত। ভয়ে চুপ করে থাকতাম।’’
ধৃত বিলকিশা জানিয়েছে, কলকাতায় যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়ার উদ্দেশে ওই নাবালিকাকে অপহরণ করেছিল সে। এর আগে দু’বার ট্রেন পথে ওই নাবালিকাকে নিয়ে কলকাতায় যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু স্টেশনে পুলিশকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে ধরা পড়ার ভয়ে পালিয়ে আসে সে। এই ক’দিন বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে কাটায় সে। এ দিন বাস ধরে কলকাতা যাওয়ার চেষ্টা করে। তখনই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ভগবানগোলার খুদগিরিয়া খাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিলকিশার বিরুদ্ধে এর আগেও মেয়ে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। তবে বার বার পুলিশের জাল কেটে বেরিয়ে যায় সে। এ দিন দুপুরেই বিলকিশাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ভগবানগোলার এক সোনার দোকান থেকে অপহৃত বালিকার সোনার দু’টি দুল উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণের পর টাকার জোগাড় করতে দুল দু’টি বিক্রি করেছিল বলে জেরায় জানায় বিলকিশা। ওসি সমিত তালুকদার বলেন, ‘‘এক বাসকর্মীর তৎপরতায় ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করা গিয়েছে। এ আগেও বিলকিশার বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু কোনও ভাবেই তাকে ধরা যায়নি।’’
জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘পাচার করার উদ্দেশে ওই নাবালিকাকে অপহরণ করা হয়েছিল। পুলিশের তাকে চার দিনের মাথায় উদ্ধার করেছে। পাচারকারীরাও ধরা পড়েছে। সেই সঙ্গে এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’