রোগী সেজে চেম্বারে প্রশাসনিক কর্তা

‘নেক্সট কে’, হাঁক পাড়লেন হাতুড়ে

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় বিশ বছর ধরে কৃষ্ণনগর স্টেশন রোড এলাকায় এসবিবিএস ডিগ্রি লিখে চিকিৎসা করে আসা স্বপন সরকার। যিনি আদৌ কোনও দিন ডাক্তারি পড়েন নি। অথচ সাইবোর্ড থেকে প্রেসক্রিপশনে এমবিবিএস লিখে শয়ে শয়ে রুগী দেখে আসছেন। এমনকী ডেথ সার্টিফিকেটও দিয়ে এসেছেন অকাতরে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ০১:৪০
Share:

চেম্বারের ভিতরে টানটান বেঞ্চিতে জনা পনেরো রোগী, পুরনো টিউব লাইটের আলোয় ঝিম মেরে আছে। রান্না করতে গিয়ে হাত-পোড়া এক মহিলাও রয়েছেন, গরমে নাইতে নাইতে যিনি মাঝে মধ্যেই বিড়বিড় করছেন, ‘‘বাব্বা হাতটা জ্বলে গেল গো!’’ সময় আর হচ্ছে না, মাখা নিচু করে এক মনে প্রেসক্রিপশন লিখেই চলেছেন মাঝবয়সী ডাক্তার।

Advertisement

মিনিট পঁচিশ পরে ঢাউস টেবিলটা ঘড়ঘড় করে ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁক পাড়লেন চিকিৎসক, ‘‘হ্যাঁ, নেক্সট...’’ তার পর, স্টোথো বুক-পিঠের বদলে ঘুরতে লাগল হাতের কব্জি থেকে হাঁটু, গলা কিংবা কপালেও। ‘‘কি দেখছেন ডাক্তারবাবু, আপনি না এমবিবিএস?’’ একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলেন সুশোভন সরকার। তার পর চোখ পাকিয়ে হ্যাঁ এবং না-এর মাঝামাঝি একটা উত্তর ঝুলিয়ে গেরামভারী চালে পাল্টা প্রশ্ন রাখলেন, ‘‘আপনারা?’’

গ্রামীণ চেহারার বাইরে, যে দু’টি মানুষ এতক্ষণ জ্বরের ভান করে কোনে বসেছিলেন চুপ করে, উঠে দাঁড়ান তাঁরা। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শচীন ভকত, এসডিও (কনফিডেনশিয়াল) জ্যোর্তিময় রায়। ডাক্তারের চেম্বারে ছানবিন করতে যাঁদের পাঠিয়েছেন কৃষ্ণনগর (সদর) মহকুমাশাসক অম্লান তালুকদার। ‘‘কি বলতে চান আপনারা স্যার!’’ গলা যেন একটু নরম হয়ে আসে সুশোভন ডাক্তারের। তার পর, মিনমিন করে স্বীকারও করে নেন, ‘‘আসলে চেম্বার তো বাবাই চালান, অসুস্থ বলে আমি একটু ওষুধ দিচ্ছিলাম।’’ গাড়িতে ওঠার আগে, নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেন ভুয়ো চিকিৎসকের লম্বা মিছিলে শেষ সংযোজন সুশোভন সরকার।

Advertisement

ভুয়ো ডাক্তারের দেওয়া মৃত্যু-শংসাপত্র। নিজস্ব চিত্র

কে এই সুশোভনবাবুর বাবা? মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় বিশ বছর ধরে কৃষ্ণনগর স্টেশন রোড এলাকায় এসবিবিএস ডিগ্রি লিখে চিকিৎসা করে আসা স্বপন সরকার। যিনি আদৌ কোনও দিন ডাক্তারি পড়েন নি। অথচ সাইবোর্ড থেকে প্রেসক্রিপশনে এমবিবিএস লিখে শয়ে শয়ে রুগী দেখে আসছেন। এমনকী ডেথ সার্টিফিকেটও দিয়ে এসেছেন অকাতরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন