কৃষ্ণনগরে জেলা সংশোধনাগার। নিজস্ব চিত্র
কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের শহরের সংশোধনাগার থেকেই পালাল সাজাপ্রাপ্ত বন্দি! এই ঘটনায় বুধবার ভোর থেকে হুলুস্থুলু পড়ে যায় কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধনাগারে।
খবর পেয়ে ছুটে যান কারা দফতরের দমদম রেঞ্জের ডিআইজি অরিন্দম সরকার। শুরু হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত। যদিও আসরাফুল মোল্লা নামে ওই আসামী কী ভাবে পালাল, তা এখনও জানা যায়নি। এ দিন সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে অরিন্দম বলেন, ‘‘কী করে এটা হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।”
তবে ওই সংশোধনাগারে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে এ ভাবে বিভ্রান্ত হতে হত না বলেই মনে করছেন কারাকর্তাদের একাংশ। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, এখন যেখানে পুজোর প্যান্ডেলেও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে, সেখানে সংশোধনাগারে ওই নজরদারি কেন থাকবে না। কারামন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা সেন্ট্রাল জেলগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছি। এবার জেলা সংশোধনাগারে বসানো হবে।’’
পুলিশ ও সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, পলাতক ওই আসামীর আসরাফুলের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া থানার চৌহাটা গ্রামে। মাদক বিরোধী আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামী দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধনাগারে এসেছিল এই বছরের ১০ মার্চ। আসরাফুলের সাজার মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কয়েক বছর পরে তার মুক্তি পাওয়ার কথা। একাধিকবার সে প্যারোলে বাড়িতেও গিয়েছে। তার পরেও সে কেন এমনটা করল, তা নিয়ে রীতিমত সংশয় প্রকাশ করেছেন কারা দফতরের অনেক কর্তাই।
সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ভোর ৫টা নাগাদ আসামীদের সেল থেকে গণনা করে ছাড়ার সময়ে দেখা যায়, পুরনো ভবনের চার নম্বর ঘরের এক জন আসামী নেই। খবর চলে যায় কর্তৃপক্ষের কাছে। সংশোধনাগার তোলপাড় করে শুরু হয়ে যায় খোঁজাখুঁজি। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায় নি। পরে দেখা যায়, সংশোধনাগারে ঢুকতে ডান দিকে পাঁচিলের সঙ্গে ঝুলে আছে একটা লোহার রড। আঁকশি করে বাঁকিয়ে পাঁচিলের সঙ্গে আটকে রাখা আছে। তার সঙ্গে বাঁধা আছে দু’টি গামছা। তখনই কর্তৃপক্ষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে এই আঁকশি ব্যবহার করেই সে পাঁচিল টপকেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও জেল থেকে আসরাফুল কী করে পালাল, তা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ, এখন সংশোধনাগারে দু’টি পাঁচিল। পালাতে হলে একই ভাবে পরের পাঁচিলটিও টপকাতে হবে। তবে সংশোধনাগারের কর্মীদেরই একটা অংশের দাবি, লোহার রডের আঁকশি ব্যবহার করে আসরাফুল প্রথম পাঁচিলে ওঠে। তার পরে সামনের দিকে অফিস ঘরের ছাদ ও কর্মীদের মেসের পাঁচিল ব্যবহার করে সে পালিয়ে থাকতে পারে।
ওয়ার্ড থেকে আসরাফুল কী করে বাইরে এল তা-ও জানা যায়নি। সংশোধনাগার সূত্রের খবর, ৪ নম্বর ঘরের শৌচাগারে একটি ছোট ফাঁকা জায়গা আছে। সেই ফাঁক গলেই নাকি সে পালিয়ে থাকতে পারে। সংশোধনাগারের কর্মীদের আরেকটি অংশ মনে করছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আসাফুল আদৌ ওয়ার্ডে ঢোকেনি। সংশোধনাগারের ভিতরে কোথাও অন্ধকারে সে লুকিয়ে ছিল। কর্মীরা কালীপুজো নিয়ে মেতে থাকায় গণনার সময় তাড়াহুড়োয় তা হয়ত ধরা পড়েনি। পরে কালীপুজো শেষ হয়ে গেলে সময় সুযোগ মতো সে পাঁচিল টপকেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি কালীপুজোর আনন্দে মেতে থাকা কর্মীদের গাফিলতিই এর জন্য দায়ী? কারামন্ত্রী বলেন, “পুজোর মধ্যে যারা ছিল তাদের গাফিলতি তো আছেই। সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যাদের গাফিলতি ধরা পড়বে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।”