Krishnanagar

বিশুর সেলুনে চিরুনিতেও স্যানিটাইজ়ার

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউনে বন্ধ থাকার পর সবে অনুমতি মিলেছে সেলুন খোলার।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২০ ০৪:৩৮
Share:

সতর্কতা মেনে। নিজস্ব চিত্র

হঠাৎ তাঁকে দেখলে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে শল্য চিকিৎসকের সাহায্যকারী বলে ভুল হতে পারে। মাথায় সার্জিক্যাল ক্যাপ, মুখে মাস্ক। পরনের হাল্কা আকাশি রঙা ফুলহাতা শার্ট। স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো পোশাক পরে যে কেউ চুলদাড়ি কাটতে পারে তা আগে কখনও দেখেনি কৃষ্ণগঞ্জের মানুষ!

Advertisement

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউনে বন্ধ থাকার পর সবে অনুমতি মিলেছে সেলুন খোলার। তা বলে এতদিন ধরে জমে থাকা চুলের বোঝা মনে করলেই ছাঁটা যাবে না বিশ্বজিৎ প্রামাণিকের সেলুনে। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক কৃষ্ণগঞ্জ বাজারে গত সোমবার থেকে খুলেছে ‘বিশুর সেলুন’। করোনা রুখতে প্রায় সওয়া দু’মাস পর খুলে যে ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেলুন চালাচ্ছেন বিশ্বজিৎ ওরফে বিশু, তা গোটা এলাকায় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে। এমনিতে সাদামাটা মফস্সলের সেলুন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে পালনীয় আচরণ বিধির দৌলতে তাই হয়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী। সেলুনের মুখেই সাঁটানো সতর্কবার্তা। সেখানে সাত দফা নির্দেশাবলী। যথা, মাস্ক পরে থাকতে হবে। দোকানদারের অনুমতি ছাড়া সেলুনে প্রবেশ করা যাবে না। সেলুনে ঢোকার আগে ভাল করে হাত স্যানিটাইজ় করাতে হবে। জ্বর-সর্দি থাকলে সেলুনের কাজ বন্ধ রাখুন ইত্যাদি।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছয় নম্বর নির্দেশ। এই পরিষেবা নেওয়ার আগে সেলুনের ডায়েরিতে নিজের নাম, ফোন, নম্বর নথিভুক্ত করতে হবে।

Advertisement

যদি ভিতরে আগে থেকেই লোক থাকেন তা হলে অন্য জন কতক্ষণ পরে আসবেন সেটা খরিদ্দারকে বলে দেওয়া হচ্ছে। বড়জোর আধঘণ্টা বা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের অপেক্ষা। সেই ফাঁকে অন্য কাজ সেরে আসাই ভাল। কারণ, সেলুনের ভিতরে বসার উপায় নেই। চুল বা দাড়ি কাটার আগেই নিজের হাতে নাম-ঠিকানা এবং ফোন নম্বর ডায়েরিতে লিখে দিতে হচ্ছে। কেউ লিখতে না জানলে তখন বিশ্বজিৎ নিজেই লিখে নিচ্ছেন। এর পর বিশেষ জীবাণুনাশক দ্রবণে ডোবানো চিরুনি, কাঁচি, ক্ষুর বা ব্লেডকে তুলে শুকিয়ে ফের স্যানিটাইজ়ারে ভেজানো তুলো দিয়ে মুছে তবেই শুরু হবে চুল কাটা।

বিশ্বজিৎ প্রামাণিক জানান, “শুনেছি সেলুন থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা খুব বেশি। তাই প্রথম থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করব। এ জন্যই ডায়েরির ব্যবস্থা। দেখুন, চেনাঅচেনা কত মানুষ চুলদাড়ি কাটাতে আসবেন। প্রয়োজন হলে সহজেই যেন তাঁদের হদিস পাওয়া যায়।”

সেলুনের সতর্কতা প্রসঙ্গে বিশ্বজিতের কথা, “এ সবই সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি। বেশিরভাগ মানুষ মানছেন না বলেই আমারটা ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এমনটাই স্বাভাবিক।”

সতর্কতার এখানেই শেষ নয়। চুল কাটার সময় সেলুনে যে গা-ঢাকার আস্তরণ ব্যবহার করা হয়, তাতেও বদল এনেছেন বিশ্বজিৎ। সাধারণত একটি বা দু’টি গা-ঢাকা পাল্টাপাল্টি করে দেওয়া হয় অন্য সময়ে। কিন্তু বর্তমানে সংক্রমণ ঠেকাতে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে বাজার থেকে কিনে নিয়েছেন সস্তার ছিট কাপড়। তৈরি করেছেন খান কুড়ি গা-ঢাকা। যার একটি ব্যবহার করার পরেই ভিজিয়ে দেওয়া হচ্ছে ডিটারজেন্টে।

এত কিছু করেও বিশ্বজিৎ চুলদাড়ি কাটার জন্য অবশ্য খুব বেশি দাম ধার্য করেননি। এমনিতে চুল কাটা তিরিশ টাকা আর দাড়ি কুড়ি টাকা। এখন তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত পাঁচ টাকা করে। বিশ্বজিৎ বলেন, “আগে সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করতাম। এখন দশটা থেকে ছ’টা। ফলে সাত-আট জনের বেশি খদ্দের হচ্ছে না। অনেকেই ভয়ে সেলুনে আসছেন না। জানি না, কত দিন এই অবস্থা চলবে।”

তবে সেলুনের সাবধানতায় খুশি এলাকার মানুষ। এই বাজারেও চুল কাটা নিয়ে অনেকের ভয় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন