100 Days Work

সহায়তা শিবির নিয়ে আশঙ্কা তৃণমূলেই

বিরোধীরা অবশ্য এই সহায়তা শিবিরকে স্রেফ সন্দেশখালি থেকে তৃণমূলের নজর ঘোরানোর চেষ্টা বলে কটাক্ষ করেছেন।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৭
Share:

রঘুনাথগঞ্জের কানুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে চলছে তৃণমূলের সহায়তা কেন্দ্র।  ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

তৃণমূলের সহায়তা শিবিরে দীর্ঘ লাইন দেখে তৃণমূলের অন্দরেই ‘শিবির’ নিয়ে হিতে বিপরীতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না নেতাদের একাংশ। জঙ্গিপুরের তৃণমূলের জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান বলছেন, “যাঁদের টাকা বকেয়া নেই তাঁরাও ফর্ম জমা দিচ্ছেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছে যে তালিকা রয়েছে, তাতে যাঁদের নাম আছে তাঁরাই বকেয়ার টাকা পাবেন, অন্যরা নয়।”

Advertisement

রবিবার থেকে শুরু হওয়া এই শিবিরে নাম লিখিয়ে আবেদনপত্র জমা দিলেই ১০০ দিনের প্রকল্পে অর্থ পাওয়া যাবে ভেবে বহু জব কার্ড হোল্ডার যে ভাবে ভিড় করে নাম লেখাচ্ছেন, তাতে পাওনাদারের সংখ্যাকে তা অনেকটাই ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধীরা অবশ্য এই সহায়তা শিবিরকে স্রেফ সন্দেশখালি থেকে তৃণমূলের নজর ঘোরানোর চেষ্টা বলে কটাক্ষ করেছেন।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহরায় বলেন, “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ভাবে ভোটের আগে প্রচার করতে নিজেরাই পিসি, ভাইপোর ছবি ও তৃণমূলের প্রতীক সহ ফর্ম ছাপিয়ে নাটক করছেন। কাদের কত টাকা পাওনা, সে তো প্রতিটি ব্লক ও জেলা শাসকের অফিসে রয়েছে। তার বাইরে এই আবেদনের কী মূল্য?”

Advertisement

কংগ্রেসের জেলার সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত দাস বলছেন, “আবেদন করলেই টাকা দিতে পারবেন তো নেতারা? তা না হলে এই ভাবে সহায়তা কেন্দ্র খুলে আবেদন নিচ্ছেন কেন? তৃণমূল সরকারের চুরি, জোচ্চুরি, গুন্ডামি ও নেতাদের ধর্ষণ কাণ্ডে মানুষ ক্ষিপ্ত। সেটাকে চাপা দিতেই এ সব করছেন।”

বিরোধীদের এই কটাক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের রাজ্যের সহ সভাপতি মইনুল হক বলেন,“এটা দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি। ১৮ থেকে শিবির চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জেলার সমস্ত পঞ্চায়েতে দলের নেতারা এই শিবির খুলে উপস্থিত রয়েছেন। যাঁদের জব কার্ডের টাকা পাওনা রয়েছে দলের ছাপানো একটি ফর্মে নাম, ঠিকানা, জব কার্ড, ফোন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর ইত্যাদি দিয়ে তা জমা নেওয়া হচ্ছে। দলের মাধ্যমে এটা পঞ্চায়েতে যাবে। ১ মার্চ থেকে সেই মতো বকেয়া টাকা দেবে রাজ্য সরকার।”

সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বলেন, “রাজনৈতিক দল হিসেবে মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেটা দেখা এবং আমরা যে ভাল কাজ করছি সেটা বোঝানো দরকার। সর্বত্র উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সহায়তা কেন্দ্রে আসছেন মানুষ।”

কিন্তু জেলায় ১০০ দিনের কাজে টাকা বকেয়া রয়েছে ২৬টি ব্লকে ১৭৩২৫৩ জনের। মোট বকেয়ার পরিমাণ ৯৩ কোটি ১৪ লক্ষ ৬১ হাজার ৩৩৬ টাকা। প্রথম দু’দিনেই প্রায় ৭০ হাজার জব কার্ড হোল্ডার বকেয়া টাকার জন্য নাম লিখিয়েছেন। আরও ৬ দিনে সেটা কোথায় পৌঁছবে তা এখন দেখার।

বিধায়ক কানাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “শুধু নবগ্রাম ব্লকেই দু’দিনে ফর্ম জমা পড়েছে ১০ হাজারের বেশি। তবে নবগ্রামে ১৯০৫৩ জনের পাওনা রয়েছে ১০ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকারও বেশি। তবে কিছু লোক বাড়তি ফর্ম জমা দিচ্ছেন।”

তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে, ভগবানগোলা ২ ব্লকে দু’দিনেই জমা পড়েছে প্রায় ৭ হাজারের কাছাকাছি নাম। কিন্তু সেখানে ১০০ দিনের কাজে বকেয়া রয়েছে মাত্র ১৪৪০ জনের ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৩১ টাকা।

এই হিসেবের কারণেই তৃণমূলের এক জেলা নেতার মতো অনেকে বলছেন, “এই সহায়তা কেন্দ্র হিতে বিপরীত হবে না তো? সবারই ফর্ম জমা দিচ্ছেন। টাকা না পেয়ে এরপরে তাঁরাই বলবেন না তো, তৃণমূলের নেতারা টাকা মেরে নিয়েছেন?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন