পারিবারিক পুজো দেখতে ভিড় দর্শনার্থীদের

বাড়ির নতুন বৌ-ই আরাধ্যা হরিনাথপুরে

ফি-বছরের বিজয়া দশমীর দিন থেকে কালীমূর্তির কাঠামো তৈরি দিয়ে সূচনা হয় কালীপুজোর। একাদশীতে কাঠামোয় মাটি দেওয়া। তার পর দীপান্বিতা অমাবস্যায় দেবী বুড়িমা নামে পূজিতা হন। 

Advertisement

সন্দীপ পাল

কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৫
Share:

প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে থেকে কালীপুজো শুরু হয়েছে হরিনাথপুরের ভট্টাচার্য বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

ফি-বছরের বিজয়া দশমীর দিন থেকে কালীমূর্তির কাঠামো তৈরি দিয়ে সূচনা হয় কালীপুজোর। একাদশীতে কাঠামোয় মাটি দেওয়া। তার পর দীপান্বিতা অমাবস্যায় দেবী বুড়িমা নামে পূজিতা হন।

Advertisement

নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, কলকাতা থেকেও প্রতি বছর অনেকে এই পুজো দেখতে আসেন। ওই পরিবারের অন্যতম মহেশ্বর ভট্টার্চায বলেন, ‘‘পুজো শুরুর ঠিক দিনক্ষণ না জানা গেলেও পরিবারের হিসেব বলছে, প্রায় ৩৫০ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়।’’

তাঁর মুখেই শোনা গেল এই পুজো ঘিরে প্রচলিত এক অলৌকিক জনশ্রুতি। ঘটনার শুরু বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহি জেলার নাটোর মহকুমার অন্তর্গত একটি অখ্যাত গ্রামে। নাম মাঝগ্রাম। দেবীদাস ছিলেন অত্যন্ত সরল ও সাধক প্রকৃতির মানুষ, গরিব ব্রহ্মণ। তাঁর একমাত্র ইচ্ছা ছিল গঙ্গাতীরে বসবাস করা। সেই জন্য তিনি পৈত্রিক বাসস্থান ছেড়ে চলে এসেছিলেন কালীগঞ্জ থানার জুরানপুর গ্রামের কাছে শ্রীরামপুর গ্রামে। সেখানে দুই পুত্র রাজারাম ও নৃসিংহকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন তিনি। ছোট থেকে দেবীদাসের রাজারামকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। ছোট থেকে সে সাধক মনোভাবের। জুরানপুর পীঠস্থানের বর্তমান বটগাছটির কাছ দিয়ে তখন গঙ্গা বয়ে চলেছে। তার কাছেই ছিল শ্মশানঘাট। সেখানেই রাজারাম সাধনা করতেন ও সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। সিদ্ধিলাভ করে তিনি জগৎমাতাকে স্ত্রী রূপে পাওয়ার সাধনা করেছিলেন।

Advertisement

রাজারাম নাকি স্বপ্নাদেশ পান, মা কালী তাঁর স্ত্রী হয়ে বাড়িতে আসবেন। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মহুলা গ্রামে সরস্বতীর কন্যা শচীদেবীর সন্ধান মেলে। সেখানে বিয়ে মিটে গেলে বৌভাত অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। নতুন বৌ নিজের হাতে খাবার পরিবেশন করবেন নিমন্ত্রিতদের। এটাই রেওয়াজ। কিন্তু সেই আনন্দের অনুষ্ঠানে যে এমন কিছু ঘটবে, ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি পরিবারের সদস্যেরা। সেই ঘটনা ঘটেছিল, নাকি ঘটেনি— তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও কালীগঞ্জের হরিনাথপুরে সেই ঘটনার কথা আজও লোকমুখে ফেরে। বৌভাতে ভাত দিতে গিয়ে নতুন বৌয়ের ঘোমটা খুলে যায়। এ দিকে, নতুন বৌয়ের হাত ব্যস্ত— এক হাতে ভাতের পাত্র, অন্য হাতে হাতা। কিন্তু আচমকা আরও দুটো হাত ঘোমটা টেনে নেয়। তাই দেখে হতভম্ভ হয়ে পড়ে নিমন্ত্রিতের দল। এমন অবস্থায় পড়ে লজ্জায় রাঙা নতুন বৌ ছুট দিলেন বাড়ির বাইরে। তার পর আর সেই বৌকে খুঁজে পাননি কেউ-ই। সেই ঘটনার পর থেকে রাজারামকেও নাকি আর খুঁজে পায়নি ওই পরিবার।

প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগের ওই ঘটনার পর থেকেই হরিনাথপুরের ভট্টাচার্য বাড়িতে শুরু হয় কালীপুজো। সেই পুজোর ঐতিহ্য আজও চলছে। দেবী এখনও বাড়ির বৌ রূপেই পূজিত হন এই পরিবারে। তবে আগের চেয়ে পুজোর প্রথার সামান্য কিছু অদল-বদল ঘটেছে। যেমন, আগে এই পুজোয় পাঁঠাবলি দেওয়ার চল ছিল। বছর পনেরো আগে সেই বলিপ্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয় পরিবারের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে।

কিন্তু কালীকে বাড়ির নতুন বৌ হিসাবে দেখার বিশ্বাস আরও অমলিন এই পরিবারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন