Abhishek Banerjee

এ বার নদিয়া, আরও এক পঞ্চায়েত প্রধানকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ অভিষেকের, ঘোষণা মঞ্চ থেকেই

মহানালা গ্রামের তফসিলি উপজাতি অধ্যুষিত ধনিচাপাড়ার অনুন্নয়ন নিয়ে জনসভায় সরব হন অভিষেক। গ্রাম পরিদর্শনে না যাওয়া নিয়ে প্রধানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩৫
Share:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব ছবি।

আরও এক পঞ্চায়েত প্রধানকে সরালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার নদিয়ায়। এর আগে কাঁথির জনসভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশের পরেই পদত্যাগ করতে হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে। শনিবার তারই পুনরাবৃত্তি দেখা গেল নদিয়ার রানাঘাটের সভায়। সেই সভামঞ্চ থেকে চাকদহ ব্লকের তাতলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্থপ্রতিম দে-কে পদত্যাগের নির্দেশ দিলেন অভিষেক। জানিয়ে দিলেন, সোমবার সকালের মধ্যে পঞ্চায়েত প্রধানকে ইস্তফাপত্র জমা দিতে হবে।

Advertisement

মহানালা গ্রামের তফসিলি উপজাতি অধ্যুষিত ধনিচাপাড়ার অনুন্নয়ন নিয়ে জনসভায় সরব হন অভিষেক। গ্রাম পরিদর্শনে না যাওয়া নিয়ে প্রধানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। অভিষেক বলেন, ‘‘ধনিচা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের দেখা নেই। তিনি চার বছর এখানে নেই। নাম পার্থপ্রতিম দে।’’ এর পরেই ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদের কড়া নির্দেশ, ‘‘প্রধানকে বলব, কান খুলে শুনে রাখুন। মানুষ সার্টিফিকেট দিলে তবেই আপনি প্রধান। মানুষ সার্টিফিকেট না দিলে আপনি প্রধান নন। আগামী সোমবারের মধ্যে ইস্তফা দেবেন।’’

অভিষেক জানান, তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের কয়েক জন পার্থপ্রতিমের বিরুদ্ধে সরাসরি তাঁর দফতরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই সব অভিযোগ সরেজমিনে খতিয়ে দেখতেই চার জনের একটি প্রতিনিধি দলকে ওই গ্রামে পাঠান তিনি। অভিষেকের বক্তব্য, ওই প্রতিনিধিদল গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের অভিযোগের সারবত্তা খুঁজে পেয়েছে। তিনি জানতে পেরেছেন, গত চার বছরে গ্রাম পরিদর্শনে যাননি প্রধান। শনিবারের সভায় তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আমি উদাহরণস্বরূপ বলছি। খবরটা দু’তিন দিন আগে আমার কাছে এসেছিল। তার পর আমি একটু খোঁজখবর করলাম, দেখলাম খবরটা সত্যি। চাকদহ পেরোলেই মহানালা তাতলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ধনিচাপাড়া। আমি প্রধানকে জিজ্ঞেস করব, প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর উনি শেষ কবে মহানালা গ্রামে গিয়েছেন? এখানে মহানালা গ্রামের কিংবা তাতলা পঞ্চায়েতের প্রধান উপস্থিত আছেন? এখানে বেশ কিছু এসটি অর্থাৎ সিডিউল ট্রাইব পরিবার আছে। অভিযোগ পেয়ে আমি ৪ জনের টিমকে খতিয়ে দেখতে পাঠিয়েছিলাম। ৪ বছরে প্রধান ওই গ্রামে এক বারের জন্যও যাননি। ৪ বছর যখন একটি গ্রামে যাননি, তবে উনি কেন প্রধান থাকবেন?’’

Advertisement

যদিও সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেন পার্থপ্রতিম। তাঁর দাবি, ওই এলাকা তিনি সবচেয়ে বেশি বার গিয়েছেন। ওই এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। মিথ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান। তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় সবচেয়ে বেশি বার গিয়েছি আমি। সব চেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে ওখানে। অনুন্নয়নের মিথ্যে অভিযোগ করে আমায় পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হল। খুব খারাপ লেগেছে আমার। যাঁরা গ্রামে এসেছিলেন অভিযোগ যাচাই করতে, তাঁরা সঠিক কাজ করেননি।’’ তবে পার্থ জানান, তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পদত্যাগ করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘সোমবার সকালের মধ্যেই আমি পদত্যাগ করব।’’

ঘটনাচক্রে, চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে কাঁথির জনসভায় অভিষেকের দেওয়া নির্দেশে মেনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেছিলেন মারিশদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুনুরানি মণ্ডল, উপপ্রধান রামকৃষ্ণ মণ্ডল এবং অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি গৌতম মিশ্র। সে বার জনসভায় যাওয়ার পথে মারিশদা থানার ওই ‘লোকাল বোর্ড’ গ্রামের কাছে থমকে গিয়েছিল অভিষেকের কনভয়। গ্রামে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ নিজেই চাক্ষুষ করেছিলেন জাতীয় সড়কের ধারে পর পর মাটির ঘর। তার কোনওটিতে টালির ছাউনি, কোনওটি আবার শুধু ত্রিপলে ঘেরা। তার পরেই সভামঞ্চ থেকে প্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন অভিষেক। শনিবারও রানাঘাটে কার্যত একই ছবিই দেখা গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন