যদি কিছু করে বসে, আশঙ্কাতেই অঘটন

তখন তার ক্লাস সিক্স।পাশে বসা সহপাঠীকে পেন্সিলের খোঁচায় রক্তাক্ত করে নির্ভুল ডায়ালগ ছুঁড়ে দিয়েছিল— ‘লে, অব মওতকো ওয়াক্ত গিন লে!’কেড়েকুড়ে টিফিন খাওয়া, জানলার কাচ ভাঙা, এ পর্যন্ত মেনে নিয়েছিল স্কুল। বাড়ির লোকের ডাক পড়েছিল তার পরে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩০
Share:

তখন তার ক্লাস সিক্স।

Advertisement

পাশে বসা সহপাঠীকে পেন্সিলের খোঁচায় রক্তাক্ত করে নির্ভুল ডায়ালগ ছুঁড়ে দিয়েছিল— ‘লে, অব মওতকো ওয়াক্ত গিন লে!’

কেড়েকুড়ে টিফিন খাওয়া, জানলার কাচ ভাঙা, এ পর্যন্ত মেনে নিয়েছিল স্কুল। বাড়ির লোকের ডাক পড়েছিল তার পরে।

Advertisement

কিন্তু বাবা-মা’র মুখে ‘বকাঝকা করলে অন্যকিছু করে বসলে’— শুনে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন হেডমাস্টার মশাইও। ‘ঝকা’ তো দূরের কথা, দু’চারটে আটপৌরে বকুনিও জোটেনি তার।

ঘাবড়ে যাওয়া সেই অনুশাসনহীনতাই কি অনুচ্চারিত প্রশ্রয় হয়ে উঠছে? সমাজবিজ্ঞানী কিংবা শিশু অপরাধ বিশেষজ্ঞদের সিংহভাগই আঙুল তুলছেন শাসনের সেই ভারসাম্যের দিকে।

ফেসবুকে বন্ধুত্ব এবং দিন কয়েক অপরিণত ভালবাসার পরে তাই মেয়েটিকে ‘তুই মরে গেলেই ভাল’ বলতেও কসুর করে না হালের বয়ঃসন্ধি। কখনও বা আরও এক ধাপ এগিয়ে, গলা টিপে-পিটিয়ে-ধারালো অস্ত্র চালিয়ে ‘বন্ধু’কে খুন করেও দিনের পর দিন নির্বিকার থেকে যায় তারা। তার পর? সমাজবিজ্ঞানী সায়ন্তন দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘অপরাধ ঘটিয়ে ছেলেমেয়েদের নির্লিপ্ত থাকার এই অভ্যাসটাই বড় মারাত্মক।’’ বহরমপুরের শুভদীপ কর্মকারের বান্ধবীর প্রতি ‘মৃত্যুকামনা’ থেকে কৃষ্ণনগরের দেবাশিস ভৌমিকের খুন— সায়ন্তন মনে করছেন, সব ঘটনার শেকড় একই অন্ধকারে ডুবে আছে। দীর্ঘ দিন, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের বিচারক ছিলেন কুণাল দে। তিনিও মনে করেন, ‘‘অভিভাবকেরা ছেলে-মেয়েদের শাসন করা দূরে থাক তাদের ভাবগতিক, চলাফেরার খোঁজই রাখেন না। বরং তাদের পাল্টা চাপের কাছেই মাথা নিচু করেন। এই প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়টাই কাল হয়ে উঠছে।’’

অবহেলা কিংবা প্রশ্রয়— এ দুয়ের ভারসাম্যটা আনা যাচ্ছে না কেন?

কৃষ্ণনগরের পরিচিত স্কুল কৃষ্ণনগর হাইস্কুল। সেখানে শিক্ষকদের প্রতি পদে পড়তে হচ্ছে এমনই অস্বস্তিকর অবস্থায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “বাবা-মা ’র ভালো নম্বরের নিরন্তর চাপ আর সঙ্গে রয়েছে ছেলেমেয়েদের পাল্টা চাহিদা— দামি মোবাইল, মোটরবাইক। সবাই যেন ছুটছে। আর সেই দৌড়ই অধিকাংশ সময়ে শেষ হচ্ছে এক অসুস্থ পরিবেশে।’’

মদের ঝগড়ায় বন্ধু খুনের সদ্য এই ঘটনার আগেও কৃষ্ণনগর দেখেছে, কলিজিয়েট স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র অতনু মন্ডল খুনের ঘটনা। ছেলেটির বাবা অনিলবাবু বলছেন, “শুধু পুলিশ-প্রশাসনের উপরে ভরসা করলে চলবে না। বাপ-মা এবং গোটা সমাজকেই এ ব্যাপারে সচেন থাকতে হবে। কারণ এই ব্যাধি ঢুকে গিয়েছে সমাজের গভীরে।”

তবে, অনুশাসনের তো অভাব নেই মাদ্রাসার চৌহদ্দিতে? গত বছর, রঘুনাথগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় সে সবের তোয়াক্কা না করে দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে পিটিয়ে খুন করেছিল পাঁচ সহপাঠী। কী করে সম্ভব হল তা?

সমাজবিজ্ঞানী রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রশ্নটা সেই ভারসাম্যের, প্রশ্রয় দেব নাকি শাসন করব—এ দুয়ের সামঞ্জস্য বজায় রাখাটাই আসল কাজ। অতিরিক্ত অনুশাসনওঅনেক সময়ে কাল হয় বইকি!’’

তা হলে কি ধরে নেব, এ দুয়ের মাঝে সেতুটায় ফাটল ধরেছে বলেই ক্রমান্বয়ে ঘটে চলেছে, ‘মদের ঝগড়ায় কিশোর খুন!’

(তথ্য সহায়তা: শুভাশিস সৈয়দ )

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন