তৈরি হল হেলে পড়া সেই শৌচালয়

সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হতেই ভাঙা হল হেলে পড়া নির্মীয়মান শৌচালয়। ইতিমধ্যে সেখানে শুরু হয়েছে নতুন শৌচালয় তৈরির কাজ। প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় খুশি দিনমজুর রাসেল হকের স্ত্রী জ্যোত্‌স্না বিবি। তবে মুখভার সরকারি ভর্তুকিতে ভগবানগোলা থানার ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শৌচালয় তৈরির দায়িত্বে থাকা ‘সম্মতিনগর ইউনিক সোশ্যাল অ্যান্ড হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’ নামের বেসরকারি সংস্থার কর্তাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৭
Share:

নতুন করে তৈরি হচ্ছে শৌচাগার। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হতেই ভাঙা হল হেলে পড়া নির্মীয়মান শৌচালয়। ইতিমধ্যে সেখানে শুরু হয়েছে নতুন শৌচালয় তৈরির কাজ। প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় খুশি দিনমজুর রাসেল হকের স্ত্রী জ্যোত্‌স্না বিবি। তবে মুখভার সরকারি ভর্তুকিতে ভগবানগোলা থানার ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শৌচালয় তৈরির দায়িত্বে থাকা ‘সম্মতিনগর ইউনিক সোশ্যাল অ্যান্ড হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’ নামের বেসরকারি সংস্থার কর্তাদের। নিম্নমানের শৌচালয় তৈরির জন্য ওই সংস্থাটিকে ‘শো-কজ’ করা হয়েছে। ভগবানগোলা ১-এর বিডিও শ্যামলকুমার সেন বলেন, “শো-কজের জবাব সন্তোষজনক না হলে ওই সংস্থাকে শৌচালয় নির্মাণের কাজ থেকে বাদ দেওয়া হবে।”

Advertisement

ভগবানগোলা ১ নম্বর ব্লকে ‘মিশন নির্মল বাংলা’ অভিযানের ‘ব্লু টয়লেট’-এর ‘পাইলট প্রজেক্ট’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় গত নভেম্বর মাসে। সমীক্ষা অনুসারে ওই ব্লকে শৌচালয় না থাকা পরিবারের সংখ্যা ১৮ হাজার ৫৩৩। পাইলট প্রজেক্ট অনুসারে প্রতিটি বাড়িতে শৌচালয় গড়ার সিদ্ধান্ত হয়। শৌচালয়ের আয়তন সাড়ে তিন ফুট বাই সাড়ে তিন ফুট। ‘ব্লু টয়লেট’-এর মাথায় থাকবে টিনের চালার বদলে ঢালাই ছাদ। টিনের দরজার বদলে থাকবে পিভিসি দরজা। শৌচালয়ের ভিতরে নলবাহিত জল সরবরাহের জন্য জলট্যাঙ্ক থাকবে। প্রচলিত ভরতুকির শৌচালয়ের জন্য উপভোক্তাকে দিতে হয় ৯০০ টাকা। বাকি ১০ হাজার টাকা সরকার দেয়। ‘ব্লু টয়লেট’ প্রচলিত শৌচাগারের থেকে উন্নত মানের হওয়ায় উপভোক্তারা ৯০০ টাকার বদলে জমা দেন ৩ হাজার টাকা।

গত নভেম্বর মাসে প্রথম পর্যায়ের শৌচালয় নির্মাণের জন্য ভগবানগোলা ১ নম্বর ব্লকের ৯৫৮০ জন উপভোক্তা তাঁদের ৩ হাজার টাকা জমা দেন। শৌচালয় নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ৪টি বেসরকারি সংস্থাকে। প্রথম পর্যায়ের ৯৫৮০ জন উপভোক্তার মধ্যে রয়েছেন হাবাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের খোজারপাড়া সংসদ এলাকার ওলাপুরের দিনমজুর রাসেল হকের ঘরণি জ্যোত্‌স্না বিবি। বিয়ের সময় মায়ের কাছ থেকে পাওয়া কানের এক রত্তি সোনার রিং-টুকু মহাজনের কাছে বাঁধা রেখে জ্যোত্‌স্না ৩ হাজার টাকা জমা দেন ‘সম্মতিনগর ইউনিক সোশ্যাল অ্যান্ড হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’ নামের বেসরকারি সংস্থার কর্তাদের। কিন্তু তার ৫ মাস পরেও তিনি শৌচালয় পাননি। সোজা দাঁড়িয়ে থাকার বদলে এক দিকে কাত হয়ে পড়েছিল নির্মীয়মান শৌচালয়। দেওয়ালে ধরেছিল ফাটল। আনমনে খেলায় মজে থাকা তাঁর পাঁচ ও ৭ বছরের দুই অবোধ শিশুর ঘাড়ে হেলে থাকা শৌচালয় কখন হুড়মুড়িয়ে পড়বে সেই দুঃশ্চিন্তা জ্যোত্‌স্নাদেবী কাঁটা হয়ে থাকতেন।

Advertisement

সম্প্রতি হেলে পড়া শৌচালায়ের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই বেসরকারি সংস্থাকে শো-কজ করা হয়। বিডিও বলেন, “প্রশাসনিক নির্দেশে শৌচালয় ভেঙে ফেলে নতুন করে কাজ শুরু করেছে।” ওই পাইলট প্রজেক্টে আরও অনেক ফাঁক ফোকর রয়েছে বলে অভিযোগ। হাবাসপুর পঞ্চায়েতের খোজারপাড়া সংসদের নির্বচিত সদস্য আখতার আলি বলেন, “কংক্রিট ঢালাই ভিত, ভিতের উপর ৩টি ইটের গাঁথনির পর পিভিসি দরজা সব কিছুতেই নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে। দেওয়ালের সঙ্গে দরজা সেটে না থাকায় বড়সড় ফাঁক রয়েছে। ফলে শৌচালয়ে মানুষের আব্রু রক্ষা হবে না!”

ওই ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতের শৌচালয় নির্মাণ দেখভালের জন্য রয়েছেন ৮ নির্মাণ সহায়ক। ভিত খোঁড়ার দিন থেকে কাজ শেষ হওয়ার দিন পর্যন্ত মোট ৩ বার সরেজমিনে কাজের গুণমান তদারকি করার দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা। তবু এত অভিযোগ উঠছে কেন? কয়েক জন সহায়কের জবাব, “সরকারি নিয়ম অনুসারে কাজ শুরুর আগেই উপভোক্তাদের তালিকা নির্মাণ সহায়কদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু কাজ শুরুর মাস পাঁচেক শৌচালয় নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে সেই তালিকা দেওয়া হয়নি। ফলে তদারকিতে ঘাটতি থাকছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন