সিঁড়ি ভেঙে চার তলায়, ক্ষোভ বাড়ছে আদালতে

তিন বছর আগেই ক্রিমিনাল কোর্ট ভবনে গিয়ে মামলা করা ছেড়েছেন কৃষ্ণনগর জেলা আদালতের বর্ষীয়ান আইনজীবী রণেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। জেলা আদালতে তিনি অন্যতম দাপুটে আইনজীবী বলে পরিচিত। তাঁর দু’টো পা-ই পোলিওর কারণে কোমরের নিচ থেকে অকেজো।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০৩:০৮
Share:

কৃষ্ণনগর জেলা আদালত।— সুদীপ ভট্টাচার্য

তিন বছর আগেই ক্রিমিনাল কোর্ট ভবনে গিয়ে মামলা করা ছেড়েছেন কৃষ্ণনগর জেলা আদালতের বর্ষীয়ান আইনজীবী রণেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। জেলা আদালতে তিনি অন্যতম দাপুটে আইনজীবী বলে পরিচিত। তাঁর দু’টো পা-ই পোলিওর কারণে কোমরের নিচ থেকে অকেজো। সেই প্রতিন্ধকতা তাঁকে দমাতে পারেনি। ক্রাচে ভর করে জেলা আদালতের প্রতিটি এজলাসে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এত দিন। এখন হঠাৎ মামলা করা ছাড়লেন কেন? ৭৬ বছরের এই আইনজীবীর কথায়, ‘‘কারণটা আর কিছুই না! সিঁড়ি ভেঙে চারতলা ওঠা আর সম্ভব হয় না!’’

Advertisement

লিফ্‌ট নেই— শুধুমাত্র সে কারণে কেউ মামলা ছেড়েছেন কেউবা মামলা ছাড়ার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। সিঁড়ি বেয়ে পাঁচ তলা উঠতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন নানা কাজে আদালতে আসা মানুষজনও। চরম সমস্যায় পড়েন প্রতিবন্ধীরা। কৃষ্ণনগর জেলা আদালতের ক্রিমিনাল কোর্টের পাঁচতলা ভবনটি ১৯৮৫ সালে তৈরি হয়েছিল। লিফ্‌টের দাবিও সেই তিন দশকের পুরনো। প্রথমে সিজেএম-সহ ৬টি এজলাস ছিল এই ভবনে। গত বছর কোর্টের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০টি করা হয়েছে। কিন্তু, লিফ্‌ট-সহ কোনও দাবিই পূরণ হয়নি।

প্রতিদিন গড়ে এক হাজারেরও বেশি বিচারপ্রার্থী আসেন এখানে। এ ছাড়াও আছেন কয়েক’শো আইনজীবী, মুহুরি-সহ আদালতের কর্মীরা। অথচ ন্যূনতম পরিকঠামোটুকু নেই। সম্প্রতি কোর্টে গিয়ে দেখা গেল, মামলা লড়ে উপর থেকে নেমে বার অ্যাসোসিয়েশের ঘরে ঢুকে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন প্রায় ৮৫ বছর বয়সের আইনজীবী প্রভাত চত্রবর্তী। প্রসঙ্গটা তুলতেই তিনিও বললেন, ‘‘লিফ্‌ট ছাড়া আর কাজ করা যাবে না দেখছি!’’ প্রতিদিন বহু‌ বয়ষ্ক ও প্রতিবন্ধী মানুষও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অসুস্থ ব্যক্তিদের সাক্ষী দেওয়ার দরকার হলে তো কথাই নেই। কৃষ্ণনগর ক্রিমিনাল কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশের সম্পাদক সুকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘তখন স্ট্রেচারে করে উপরে তুলতে হয়। তা দেখে আমাদেরও খারাপ লাগে। কিন্তু, কী করব?’’

Advertisement

এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে অসুস্থ, প্রতিবন্ধী কিংবা বয়ষ্ক মানুষ সাক্ষী দিতে আসতে চান না। সাক্ষী গরহাজির থাকায় বিচার প্রক্রিয়ায় দেরি হয়। সে কথা মানছেন ক্রিমিনাল কোর্টের সরকার পক্ষের আইনজীবী অরুণ পাইক। নদিয়া জেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি স্বপ‌ন ভৌমিক জানালেন, ‘‘প্রতিবন্ধী ও বয়ষ্ক মানুষের জন্য অবশ্যই লিফটের ব্যবস্থা করা উচিত।’’

শুধু লিফটের সমস্যা নয়, রয়েছে আরও সমস্যা। আদালত চত্বরে সাইকেল গ্যারাজ না থাকায় সাইকেল ও মোটর সাইকেলের ভিড়‌ থাকে। আলাদতে ঢোকার একটি মাত্র দরজা থাকায় ব্যস্ত সময়ে সমস্যা হয়। সম্প্রতি ভূমিকম্পের সময় সকলে মিলে ওই দরজা দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছিলেন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। কৃষ্ণনগর জেলা আদালতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক এজলাস। সে গুলোতে যাওয়ার জন্য ছাউনি দেওয়া রাস্তা নেই। ফলে রোদ, জল, বৃষ্টিকে মাথায় করে সকলকে এক কোর্ট থেকে অন্য কোর্টে দৌঁড়াতে হয়!

আইনজীবীদের দাবি, লিফ্‌ট-সহ সব সমস্যার কথা একাধিকবার আদালত কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ফল হয়নি। বার অ্যাসোসিয়েশনগুলির যৌথ সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস রায় আশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি হাইকোর্ট লিফট তৈরির আশ্বাস দিয়েছে।’’

আশ্বাস তো মিলল, কাজের কাজ কবে হয় দেখার সেটাই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন