তাড়িয়েছে মদ্যপ বাবা, তবু পরীক্ষা

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাতে। চাকদহ থানার সিংহেরবাগান এলাকায় ছেলেটির মামার বৌভাত ছিল। তার পেশায় রাজমিস্ত্রি বাবা আকণ্ঠ মদ খেয়ে সেখানে গোলমাল বাধান বলে অভিযোগ। অনুষ্ঠান বাড়ির লোকজন তাকে পাল্টা গালিগালাজ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাকদহ শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৮
Share:

অনুষ্ঠান বাড়িতে বাবার মাতলামোর প্রতিবাদ করেছিল ছেলে। সেই রাগে তাকে তো বটেই, তার মা আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ভাইকেও বাবা বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এক বন্ধুর বাড়িতে থেকে আজ, মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে চাকদহের শিকারপুর বিবেকানন্দ হাইস্কুলের ওই ছাত্র।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাতে। চাকদহ থানার সিংহেরবাগান এলাকায় ছেলেটির মামার বৌভাত ছিল। তার পেশায় রাজমিস্ত্রি বাবা আকণ্ঠ মদ খেয়ে সেখানে গোলমাল বাধান বলে অভিযোগ। অনুষ্ঠান বাড়ির লোকজন তাকে পাল্টা গালিগালাজ করেন। ছাত্রটিও বাবার আচরণের প্রতিবাদ করেছিল। পরে ভাই আর মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরলে বাবা তাদের ঢুকতে দেননি বলে অভিযোগ।

শিমুরালি গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলিপুকুর এলাকায় বাড়ি ছেলেটির। তারা দুই ভাই। মা বিড়ি শ্রমিক। বাবা এক সময়ে ভিন্ রাজ্যে কাজ করতেন, এখন বাড়িতেই থাকেন। স্কুল সূত্রে জানা যায়, ছেলেটি পড়াশোনায় বেশ ভাল। মাধ্যমিকে ৮২ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়েছিল সে। চাকদহ থানার সিংহেরবাগান এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে।

Advertisement

সোমবার বন্ধুর বাড়িতে বই সামনে নিয়ে বসে ছেলেটি অভিযোগ করে, ‘‘বাবা মদ খায়। জুয়া খেলে। বাড়িতে এসে মায়ের সঙ্গে গন্ডগোল করে। মা প্রতিবাদ করলে মারধর করে। এত দিন তা-ও ঘরের মধ্যে ছিল। সে দিন সকলের সামনে যা করেছে, আমাদের সম্মান ধুলোয় মিশে গিয়েছে। প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। সে কারণে পরের দিন বাবা আমাদের বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছে।’’

পাশেই বসেছিলেন ছেলেটির মা। তিনি বলেন, ‘‘ওর বাবা খুব জেদি। সে যা বলবে, সেটাই শেষ কথা। কোনও কাজের প্রতিবাদ করা যাবে না। বিয়ের পর থেকেই মাঝে-মাঝে মদ খেয়ে এসে আমায় মারধর করত। প্রতিবাদ করিনি, তাই কিছু হয়নি। কিন্তু এখন ছেলেরা বড় হয়েছে। তারাও প্রতিবাদ করছে। সেটাই হয়েছে অপরাধ।’’

এ দিন ছাত্রটির বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায়, তা বলতে পারেননি তাঁর বাবা-মা। তবে তাঁর মায়ের দাবি, “আমার ছেলের কিছু দোষ আছে ঠিকই, কিন্তু সে বৌমাকে খুব ভালবাসে। সে দিন শ্বশুড়বাড়িতে মদ খেয়ে গোলমাল করায় তাকে মারধর করা হয়। তখনই সে বাড়ি চলে আসে। বৌমাকেও সঙ্গে আসতে বলেছিল। বৌমা আসেনি। তাই মাথা গরম করে ওদের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।’’ তার পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘আমরা চাই, ওরা বাড়ি ফিরে আসুক।”

তবে ছাত্রটির মা বলছেন, “আমরা আর বাড়ি ফিরতে চাই না। ছেলের পরীক্ষার জন্য আপাতত কোথাও গিয়ে থাকব। পরে ঘর ভাড়া নিয়ে কিছু একটা করে সংসার চালাব।”

শিকারপুর বিবেকানন্দ হাইস্কুলের শিক্ষক কাশীনাথ বিশ্বাস বলেন, “ছেলেটি ভাল ছাত্র। ওর পরীক্ষা নিয়ে আমরা দুশিন্তায় রয়েছি। প্রয়োজনে যে ও আমার বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দিতে পারে, সেটা ওকে জানিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন