তৃণমূল প্রার্থী অসীম ভট্টের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন বিভাস। —নিজস্ব চিত্র
শরিকের ঢেঁকি গিলতেই হচ্ছে সিপিএমকে। যতই নেতারা সার্বিক জোটের চেষ্টা চালান, আরএসপি বা ফরওয়ার্ড ব্লককে বাগ মানানো যাচ্ছে না।
বুধবারই তেরঙ্গা আর লালঝান্ডা নিয়ে মিছিল করে এসে মনোনয়ন জমা করেছিলেন মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী শাঁওনি সিংহরায়। তবু জোটধর্ম ভেঙে বৃহস্পতিবার ওই কেন্দ্রের জন্য মনোনয়ন জমা করলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক বিভাস চক্রবর্তী। চাপের মুখে বামফ্রন্ট তাঁর নাম ঘোষণা করেছিল ঠিকই, কিন্তু এ দিন সিপিএম বা অন্য কোনও শরিকের নেতাদের তাঁর সঙ্গে দেখা যায়নি। যা থেকে সিপিএমের মনোভাব অনেকটাই পরিষ্কার বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা।
এক দিন আগেই যেখানে একসঙ্গে ভগবানগোলা ও নবগ্রামের সিপিএম প্রার্থী আর খড়গ্রাম ও মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস প্রার্থী মিলে লালবাগে গিয়ে মনোনয়ন জমা করে এসেছিলেন, তার বদলে এ দিন এমন ভিন্ন দৃশ্য কেন? বিভাসবাবুর দাবি, এ দিন তাঁর মনোনয়ন জমার কথা লালবাগ তথা জেলার সিপিএম নেতাদের জানানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “গতকাল যে সিপিএম ও কংগ্রেসের চার প্রার্থী মিলে দু’দলের পতাকা নিয়ে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিয়ে গিয়েছেন, তা জানি। তবু তাঁরা কেন আমার সঙ্গী হননি, সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন। এ নিয়ে এখনই মন্তব্য করব না।”
মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রটি ছাড়াও জেলার আরও ন’টি কেন্দ্রে এখনও জোটের সমঝোতা হয়নি। হরিহরপাড়া, সুতি, জঙ্গিপুর, ডোমকল, নওদা, বড়ঞা, কান্দি, সাগরদিঘি ও রঘুনাথগঞ্জ— এই নয় কেন্দ্রেই হয় মনোনয়ন জমা দিয়েছে বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষ, অথবা দিতে চলেছে। ইতিমধ্যেই জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘি, ডোমকল, সুতি ও হরিহরপাড়ায় মনোনয়ন দিয়ে বসে আছে দু’পক্ষ। সেই জট কি কাটবে বা নিদেনপক্ষে কমবে?
যে কেন্দ্রগুলি নিয়ে জট, তার মধ্যে পাঁচটিতে— সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, বড়ঞা, ভরতপুর ও নওদায় প্রার্থী দিয়েছে আরএসপি। প্রথম থেকেই পাঁচ আসন নিয়ে গোঁ ধরে রয়েছে তারা। দলের জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁদের পাঁচ প্রার্থীই লড়বেন। প্রচারও শুরু হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের প্রশ্নই নেই।
কিন্তু বামেদের একটি সূত্রের দাবি, বড়ঞা কেন্দ্রটি শেষমেশ কংগ্রেসকে ছেড়ে দিতে পারে আরএসপি। তার বিনিময়ে ভরতপুর থেকে কংগ্রেস প্রার্থী তুলে নিতে পারে। সম্ভবত সেই কারণেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ভরতপুরে তাঁর অতি অনুগত কমলেশ চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছেন, যাতে প্রয়োজনে এককথায় প্রার্থিপদ তোলানো যায়। এবং সেই কারণেই কংগ্রেস এখনও সে ভাবে প্রচারে নামেনি ভরতপুরে। বড়ঞা ও ভরতপুরে মনোনয়নও জমা দেননি কংগ্রেস প্রার্থীরা। এ নিয়ে স্থানীয় স্তরে দুই দলের নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে খবর।
অন্য কেন্দ্রগুলিতে অবশ্য সরাসরি জট খোলার সম্ভাবনা তুলনায় কম। যদিও ফরাক্কার বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মইনুল হক দাবি করেন, “সুতি ও রঘুনাথগঞ্জ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। ওই দুই কেন্দ্রেই তৃণমূলকে হারাতে সিপিএম শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসকেই জোটপ্রার্থী মেনে কাজ করবে বলে আমরা ইঙ্গিত পেয়েছি। অন্য আর একটি কেন্দ্রেও অনুরূপ জোটের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। সিপিএমের নেতারাও জোটের ব্যাপারে আন্তরিক। তবে শরিকদের মানাতে সমস্যা হচ্ছে।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করছেন, “কংগ্রেসের নেতাদের এই ধারণা ঠিক নয়। জোটের বিষয়ে বামফ্রন্টের সব শরিকই সমান ভাবে আন্তরিক। সকলেই চাইছেন, তৃণমূলকে হারাতে সার্বিক ঐক্য হোক। শরিক প্রার্থী যাঁরা রয়েছেন তাঁরাও বামফ্রন্টেরই ঘোষিত প্রার্থী। তাদের ছেড়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই।’’ সে ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের ফব প্রার্থীর বদলে কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গে কাস্তে-হাতুড়ি-তারা লাঞ্ছিত পতাকা দেখা গেল কেন, সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা অবশ্য মেলেনি।
এ প্রসঙ্গে সিপিএমের লালবাগ জোনাল সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী অবশ্য অনেক বেশি স্পষ্ট করে কথা বলছেন। তাঁর বক্তব্য, “নিচুতলায় আর সিপিএম-কংগ্রেস বলে আলাদা কিছু নেই। তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটা ঐক্যবদ্ধ চেহারা তৈরি হয়ে গিয়েছে। সকলেই একজোট হয়ে ভোটে প্রচারে নামবেন। তবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ৪ এপ্রিলের আগে আমরা লালবাগে যৌথ প্রচারে নামছি না। ” কেন এই সিদ্ধান্ত তা অবশ্য তিনি খোলসা করে বলেননি। তবে ৪ এপ্রিল মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন। ফলে ওই দিনই জোট-চিত্র অনেকখানি পরিষ্কার হয়ে যাবে। সিপিএম কি তবে তার জন্যই অপেক্ষা করছে?
মৃগাঙ্কবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলকে এই জেলায় শূন্যে নিয়ে যেতে যা করার, সিপিএম তা করবে। তার জন্য সব রকমের আলোচনা চলতেই পারে। এখনই জোট নিয়ে ভাবনাচিন্তায় ইতি টানার প্রশ্ন নেই।”