ছাদের চেম্বারটা খাঁ-খাঁ করছে, ডাক্তারবাবু নেই

বাতের ব্যাথাটা বড্ড চাগাড় দিয়েছে ডাক্তারবাবু, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারি না। কিংবা, —হাল বড় খারাপ ডাক্তারবাবু। কিছু সয় না পেটে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

 শান্তিপুর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১৬
Share:

ঠাকুর তৈরি চলছে। শান্তিপুরের মৈত্রবাড়িতে। — নিজস্ব চিত্র

—বাতের ব্যাথাটা বড্ড চাগাড় দিয়েছে ডাক্তারবাবু, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারি না।

Advertisement

কিংবা, —হাল বড় খারাপ ডাক্তারবাবু। কিছু সয় না পেটে।

পুজো এলেই যেন শরীরের নানা সমস্যার কথা মনে পড়ে যেত এলাকার মানুষদের। আর তার পর বিজয়া দশমীর দিন সকাল থেকে দল বেঁধে তারা হাজির হতেন শান্তিপুরের ছোট মৈত্র বাড়িতে। বাড়ির ছাদের ঘরে বসত চেম্বার। ছোট ভাই শৈবালকে নিয়ে রোগী দেখতে বসতেন চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র। সঙ্গে বিনা পয়সায় ওষুধও।

Advertisement

রোগীরা আছেন। কিন্তু ডাক্তারবাবু... আর নেই। গত ১৭ মার্চ মস্তিষ্কের ক্যানসারে মারা গিয়েছেন সুব্রত মৈত্র। রয়ে গিয়েছে শুধুই স্মৃতি। তিনি ছাড়াও এ বছর প্রায় নিরানব্বই বছর বয়সে মারা গিয়েছেন এই বংশের আর এক সন্তান অমিয় মৈত্র।

পুজো কিন্তু হবে এ বারও। তবে জৌলুস একেবারেই কম। মৈত্র বাড়ির তরফেই জানানো হয়েছে, বড় পরিবার। প্রায় প্রতি বছরই কেউ না কেউ মারা যান। তাই পুজো কখনও বন্ধ হয়নি। হবেও না।

তবু ডাক্তারবাবু যে নেই, মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। ফিকে হয়ে গিয়েছে পুজোর সব রোশনাই। শুধু নাটমন্দিরে বিচালির উপরে মাটি আর রঙ দিয়ে একচালার প্রতিমা তৈরি করে চলেছেন শিল্পী। সুব্রতবাবুর কাকা শ্রীকান্ত মৈত্র বলেন, “পুজোতে কোনও প্রাণ নেই এ বার। তবু সকলে চেষ্টা করছে দেবীর পুজোয় যেন খামতি না থাকে।”

মৈত্রদের আদি বাসস্থান ধুবুলিয়ার বেলপুকুর গ্রামে। রজনীকান্ত মৈত্র শান্তিপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই তিনি পারিবারিক দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন। পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। কোনও দিনই পশু বলি দেওয়া হতো না। একবার কলা বলি দেওয়ার সময় বিপর্যয় ঘটে। খাঁড়ার আঘাতে কলা দু’ভাগ হয়নি। পরিবারের মানুষ এটাকে অমঙ্গলের চিহ্ন বলেই মনে করেন। তাদের বিশ্বাস এর জন্যই পরের বছর পুজোর আগেই মারা যান লক্ষীকান্ত মৈত্র। বলি বন্ধ হয় মৈত্র পরিবারে।

যদিও বর্তমান প্রজন্ম এ কথা বিশ্বাস করে না। দেবী এখানে অতসী ফুলের রঙে। মহিষমর্দিনী রুপ। সামনের দু’টো হাত মুষ্টিবদ্ধ। এক হাতে ঢাল ও অন্য হাতে তলোয়ার।

প্রতি বছরের মতো এ বারও পুজো হবে আচার-অনুষ্ঠানও মেনে। এ বারেও দালানে তদারকি করতে দেখা যাবে ৯২ বছর বয়সী বৃদ্ধ কাশিকান্ত মৈত্রকে। থাকবে না শুধু তাঁর ছেলে— সবার প্রিয় ডাক্তারবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন