উদ্যোগী স্থানীয় ক্লাব

মাদক ছাড়াতে শিবির ডোমকলে

চিত্র ১: চিকিৎসা চলাকালীন হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন ডোমকলের সীমান্ত লাগোয়া হাই স্কুলের এক পার্শ্বশিক্ষক। চিকিৎসকের হাত দু’টো ধরে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু, ড্রাগের নেশা ছাড়তে পারব তো? নইলে সব যে শেষ হয়ে গেল!’’ চিকিৎসক ওই শিক্ষককে আশ্বস্ত করেন যে, সামান্য চিকিৎসা আর মনের জোর থাকলেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০০:৩০
Share:

চলছে নেশা মুক্তির চিকিৎসা। — নিজস্ব চিত্র।

চিত্র ১: চিকিৎসা চলাকালীন হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন ডোমকলের সীমান্ত লাগোয়া হাই স্কুলের এক পার্শ্বশিক্ষক। চিকিৎসকের হাত দু’টো ধরে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু, ড্রাগের নেশা ছাড়তে পারব তো? নইলে সব যে শেষ হয়ে গেল!’’ চিকিৎসক ওই শিক্ষককে আশ্বস্ত করেন যে, সামান্য চিকিৎসা আর মনের জোর থাকলেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Advertisement

চিত্র ২: সন্ধ্যা নামার একটু আগে চিকিৎসা শিবিরের বাইরে বেরনোর চেষ্টা করছিলেন ডোমকলের এক যুবক। ঠিক সেই সময়ে ওই যুবকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তাঁর মা। ছেলের মতিগতি বুঝতে পেরে চিকিৎসকের কাজটা অনেক সহজ করে দিলেন তিনিই। দাঁতে দাঁত চেপে ওই প্রৌঢ়া তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘‘জানি তোর কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বাকি জীবনটা ভাল ভাবে বাঁচতে চাইলে এটুকু কষ্ট তোকে সহ্য করতেই হবে।’’ কথা না বাড়িয়ে ওই যুবক সোজা ঢুকে গেলেন শিবিরের ভিতরে।

কোনও হাসপাতালের ছবি নয়। গত রবিবার থেকে ডোমকলে আজাদ ক্লাব নামের এক ক্লাবের চেষ্টায় শুরু হয়েছে এমনই এক চিকিৎসা শিবির। যেখানে প্রায় ১০০ জন মাদকাসক্তদের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসক থেকে শুরু করে নিখরচায় মাদকাসক্ত যুবকদের কাউন্সেলিং, থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা করেছে ওই ক্লাব। ওই ক্লাবের সম্পাদক তজিমুদ্দিন খান বলেন, ‘‘সীমান্তের এই এলাকায় যে ভাবে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে তা রীতিমতো উদ্বেগের। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেই আমরা এমন পদক্ষেপ করেছি।’’ ২১ দিনের ওই শিবির উপলক্ষে ক্লাবের তরফে প্রচার করা হয়েছিল। সেই প্রচারে সাড়া দিয়ে ডোমকলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওই ১০০ জনকে শিবিরে ভর্তি করিয়েছে তাঁদের পরিবার। চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে ওই ক্লাবের পাশে দাঁড়িয়েছেন ডোমকল মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।

Advertisement

কিন্তু হঠাৎ ডোমকলে এমন শিবির কেন?

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত কয়েক বছরে ডোমকল ও লাগোয়া এলাকায় মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনক ভাবে। যার প্রভাবও পড়ছে আসক্তের বাড়ি ও সেই এলাকাতে। মাস কয়েক আগে চুরির অভিযোগে নেশাগ্রস্ত এক যুবককে পিটিয়ে মেরেছিল গ্রামবাসীদের একাংশ। মাদকাসক্ত ছেলের বিরুদ্ধে লিফলেট ছড়িয়ে ও কেবলে প্রচার করেছিলেন ডোমকল এলাকার নিরুপায় এক বাবা—‘আমার ছেলে থেকে সাবধান’। এলাকায় ছোটখাটো চুরি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছিলেন বেশ কিছু মাদকাসক্ত যুবক। তজিমুদ্দিন বলেন, ‘‘মাদক বিরোধী প্রচার, এলাকার মানুষকে সচেতন করার মতো কিছু কাজ হচ্ছিল। কিন্তু সেটা যথেষ্ট ছিল না। একেবারে অন্য রকম পরিবেশে মাদকাসক্তদের নিয়ে এসে চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং করানোটা খুব জরুরি ছিল। আগামীতে এ রকম আরও শিবির আমরা করব। যে ভাবেই হোক ডোমকলকে মাদকমুক্ত করতেই হবে।’’

ওই ক্লাবের তরফে জানানো হয়েছে, এই শিবিরের পাশাপাশি যারা এই এলাকায় মাদকের কারবার করে তাদের উপরেও নজর রাখা হচ্ছে। তেমন বুঝলেই পুলিশে খবর দেওয়া হবে। তবে এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই এই মাদকের রমরমার জন্য পুলিশকেও দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, মাদকের এই কারবারের বিষয়ে সব জেনেও পুলিশ কিছু করে না। যদিও এমন অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশ। শিবিরের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডোমকলের এসডিপিও অমরনাথ কে। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার মানুষকেও সচেতন থাকতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন