জোড় হাতে বলছি, ঝগড়া নয়: অনুব্রত

লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের হবিবপুরে কর্মিসভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেই সভায় বড় হয়ে উঠল গোষ্ঠী কোন্দলের ছবিটাই। নেতাদের কথাতেও স্পষ্ট, রানাঘাট কেন্দ্রের লড়াইটা খুব সহজ হবে বলে তাঁরা মনে করছেন না। মঞ্চ থেকেই অনুব্রত কর্মীদের বলেন, ‘‘এ বারের লোকসভা নির্বাচন ভয়ঙ্কর নির্বাচন! নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে লাভ হবে না।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হবিবপুর শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০১:৫৭
Share:

দলীয় কর্মী সমাবেশে। হবিবপুরে। নিজস্ব চিত্র

অনুব্রত মণ্ডল এসে কর্মিসভা করে গেলেন। হাজির রইলেন বর্ষীয়ান জেলা নেতারাও। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে ছবিটা উঠে এল, তা তৃণমূলের পক্ষে মোটেও স্বস্তির নয়।

Advertisement

লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের হবিবপুরে কর্মিসভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেই সভায় বড় হয়ে উঠল গোষ্ঠী কোন্দলের ছবিটাই। নেতাদের কথাতেও স্পষ্ট, রানাঘাট কেন্দ্রের লড়াইটা খুব সহজ হবে বলে তাঁরা মনে করছেন না। মঞ্চ থেকেই অনুব্রত কর্মীদের বলেন, ‘‘এ বারের লোকসভা নির্বাচন ভয়ঙ্কর নির্বাচন! নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে লাভ হবে না।’’

এ দিন গোটা সময়টাই কর্মীদের গোষ্ঠী কোন্দলে কার্যত ধাক্কা খেলেন নেতারা। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বাধ্য হয়ে অনুব্রতকে কারও বক্তৃতা মাঝপথে থামিয়ে দিতে হয়। কাউকে বলতে হয়, ‘পরে শুনব।’ আবার কাউকে আশ্বাস দেন, নির্বাচন মিটে গেলে বাড়িতে গিয়ে চা খেয়ে আসবেন। রানাঘাট ১ নম্বর ব্লক দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে অন্য ব্লক ও শহরের নেতা এবং চেয়ারম্যানদের ডেকে পাঠান। বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

Advertisement

শুরুটা তত গোলমেলে না হলেও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। বিশেষ করে শান্তিপুর, তাহেরপুর, বীরনগর, রানাঘাটের আঁইশমালি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। মাঝে-মাঝে মেজাজও হারিয়ে ফেলতে থাকেন অনুব্রত। পরে তিনি বলেন, “মনে দুঃখ থাকতে পারে। ঝগড়া করলে মেটে না। কাজ করলে মিটে যায়। হাত জোড় করে বলছি, ঝগড়া করবেন না।”

শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের সঙ্গে পুরপ্রধান অজয় দে-র সংঘাত বহু দিনের। এ দিন অরিন্দম বলতে উঠলে কর্মীদের একাংশ হইচই বাধিয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান নেতা শঙ্কর সিংহ পরে বলেন, ‘‘শান্তিপুরের বিধয়ক তরুণ তাজা যুবক। ভাল কথা বলেছেন। কিন্তু সেই সময়ে এক জন চিৎকার করছে, পার্টি অফিসে ঢুকতে পারছি না। এটা বাস্তব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। কোন কিছু বুকে চেপে নিয়ে এ ভাবে কর্মীরা চলতে পারে না। সোজাসাপ্টা ভাবে চলতে হয়।’’

নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি মেটানোর উপরে জোর দেন শঙ্কর। রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক ও জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সমীর পোদ্দারও একই আর্জি জানান। শঙ্কর আক্ষেপ করেন, ‘‘করিমপুর থেকে হরিণঘাটা পর্যন্ত চলেছি। সবাই নিজের নিজের কথা বলেন। আত্মগত জায়গা থেকে নিজেরা বিরত থাকতে পারেন না।’’ গত বিধানসভা নির্বাচনে রানাঘাট মহকুমায় তিনটি কেন্দ্রে যে লোকসান হয়েছিল তা মনে করিয়ে দিয়ে শঙ্কর বলেন, ‘‘কেন তা হয়েছে, তার দলিল আছে। রানাঘাট শহরে সভাপতি-পুরপ্রধানের বিতর্কে জড়াতে চাই না। সতর্ক করতে চাইছি।’’

পঞ্চায়েত নির্বাচনের সঙ্গে সাধারণ নির্বাচনকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না বলেও সতর্ক করেছেন নেতারা। তাঁরা জানান, বুথে-বুথে সমন্বয় করতে হবে। অরিন্দমের নাম না করেও শঙ্কর বলেন, ‘‘বিধায়ক বক্তব্য রেখে চলে গেলে হবে না। শান্তিপুর পুরপ্রধানের অজ্ঞিগতা ও ভাবনার সমন্বয় তৈরি করতে হবে।’’ মঞ্চে হাজির ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তও। শঙ্কর বলেন, ‘‘এক সুরে কথা বলতে হবে। আমি আর গৌরী এক সুরে কথা বললে কর্মীদের মধেও এর প্রভাব পড়বে।” শেষে অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে অনুব্রত দাবি করেন, “সব ঠিক হয়ে যাবে। রানাঘাট লোকসভায় আমরা আড়াই লক্ষ ভোটে জিতব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন