অরুণ ভাদুড়ি। ফাইল চিত্র।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র, মুর্শিদাবাদের ভূমিপুত্র অরুণ ভাদুড়ি আর নেই। সোমবার কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৭৫ বছর বয়সে তিনি মারা গিয়েছেন। মৃত্যুকালে রেখে গেলেন স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ ও তাঁর গুণমু্গ্ধদের।
তাঁর আদি বাড়ি লালগোলার ললিতাকুড়ি গ্রামে। পাশের গ্রাম উড়াহারের জুনিয়র বেসিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। হস্টেলে থেকে তিনি লালগোলার এমএন অ্যাকাডেমিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ‘ইন্টার মিডিয়েট’ (স্নাতক স্তরের আগের ক্লাস) পড়ার জন্য বহরমপুরে কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন। থাকতে শুরু করেন বহরমপুর শহরের সৈয়দাবাদ এলাকায়।
কলেজের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে পড়েন তাঁর সহপাঠী নাসিরুদ্দিন আহমেদ।
নাসিরুদ্দিনের খুড়তুতো দাদা আবু দাউদ তখন বহরমপুর শহরের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষাগুরু। অরুণের এক নিকট আত্মীয় কুমার রতন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অরুণদাকে নাসিরদা নিয়ে যান আবু দাউদের কাছে। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সঙ্গীত শিক্ষার সেই শুরু।’’ ‘ইন্টার মিডিয়েট-এর পরে তাঁর আর কলেজে পড়া হয়নি। সুরই ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়ায়।
সত্তর দশকের মাঝামাঝি তিনি কলকাতায় উস্তাদ ইস্তিয়াক হোসেন খানের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন। তার পরে তিনি প্রথমে উস্তাদ সাগিরুদ্দিন খাঁ ও পরে আচার্য জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে ‘নাড়া’ বাঁধেন। ১৯৭৮ সালে নাগাদ আইটিসি (ইন্ডিয়ান টোবাকো কোম্পানি)-র ‘সঙ্গীত রিসার্চ অকাদেমি’তে ভর্তি হন। বছর খানেক পরে বহরমপুরের বসবাস উঠিয়ে তিনি কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হন। পরে ‘সঙ্গীত রিসার্চ অকাদেমি’র সঙ্গীত-শিক্ষকে উন্নীত হন।
সেতার শিল্পী পুলিন পাল, আবু দাউদ, প্রয়াত অরুণ ভাদুড়ি, তবলা বাদক নিত্যগোপাল সাহা ও কুমার রতন ভট্টাচার্যের উদ্যোগে বহরমপুর শহরে এক সময় সারারাত ধরে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর বসত। দেশের গুণী শিল্পীরা সেই সব আসরে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। তাঁর ও নিত্য গোপালের সঙ্গীত-জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১১ সালে বহরমপুরে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বহরমপুরে সুমনা ধর ও ঐশী ভট্টাচার্যের মতো তাঁর অনেক গুণী ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। ঐশী তাঁর গুরুদেবের প্রয়াণে অশৌচ পালন করছেন।