সাক্ষীকে খুনের চেষ্টা সুতিতে

প্রকাশ্য দিবালোকে ভরা বাজারের মধ্যে খুনের মামলায় প্রধান সাক্ষীকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা করল ওই মামলায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতী। বুধবার সকালের ঘটনায় গুরুতর জখম ভুবন রায় নামে ওই ব্যক্তিকে প্রথমে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি নিমতিতা রেলস্টেশন লাগোয়া দফাহাট গ্রামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নিমতিতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০১:০৪
Share:

প্রকাশ্য দিবালোকে ভরা বাজারের মধ্যে খুনের মামলায় প্রধান সাক্ষীকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা করল ওই মামলায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতী। বুধবার সকালের ঘটনায় গুরুতর জখম ভুবন রায় নামে ওই ব্যক্তিকে প্রথমে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি নিমতিতা রেলস্টেশন লাগোয়া দফাহাট গ্রামে। তিনি সুতির লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারী কর্মচারী। ঘটনায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতীর বাড়িও ওই গ্রামেই। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত নিমাই দাস পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুষ্কৃতীর ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে। দুষ্কৃতীর আনা সাইকেলটিও ঘটনাস্থলের কাছেই পড়েছিল।

Advertisement

এ দিকে, কয়েকশো মানুষের সামনে এ ভাবে খুনের চেষ্টায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওই এলাকায়। ঘটনার পরপরই বাজারের মধ্যে দোকানপাট ফেলে রেখেই পালিয়ে যান আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। এমনকী ঘটনার পর হাঁসুয়ার রক্তের দাগ মুছতে মুছতে বিনা বাধায় বাজার থেকে বেরিয়ে নিমতিতা স্টেশনের পাশে কামারপাড়া দিয়ে দুষ্কৃতী চলে গেলেও কেউ তাকে ভয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করেননি। রক্তাক্ত অবস্থায় আক্রান্ত যুবক প্রায় মিনিট দশেক ঘটনাস্থলে পড়ে থাকলেও তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করেননি কেউই। পরে আক্রান্ত যুবকেরই এক আত্মীয় বাজারেরই এক হোটেল মালিক তাঁর গলার ক্ষতস্থানে একটি গামছা জড়িয়ে দিয়ে কয়েক জনকে ডেকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে পাশেই মহেশাইল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। আপাতত বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ওই যুবকের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে দফাহাট গ্রামেই অভিযুক্ত নিমাই দাস নিজের বাড়িতেই এক ব্যক্তিকে একই ভাবে কুপিয়ে খুন করে। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করার পর দীর্ঘদিন জেলে ছিল সে। সম্প্রতি ওই খুনের মামলার বিচার শুরু হয়েছে। ভুবনবাবু হলেন সেই মামলার প্রধান সাক্ষী। এ দিকে, জামিনে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে নিমাই ফের স্বমূর্তি ধারণ করে। গ্রামেই ভুবনবাবুর ভাইয়ের একটি মুদি দোকান রয়েছে। প্রায়ই সেখানে গিয়ে ভুবনবাবুকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিত। সেই মতো এ দিন সকালে সাইকেল চালিয়ে একটি ব্যাগ নিয়ে বাজারে আসে নিমাই। ব্যাগ নিয়ে বাজারে ঢোকায় কেউ তাকে সন্দেহ করেননি। ঠিক মাছের বাজারের সামনে মদের ঠেকে মদ খেয়ে অপেক্ষা করতে থাকে সে। ছাতা মাথায় ভুবনবাবু মাছের বাজারে ঢুকতেই ব্যাগ থেকে হাঁসুয়া বের করে তাঁর মাথায় কোপ মারার চেষ্টা করে। ছাতায় লেগে কোপ গিয়ে পড়ে তাঁর ঘাড়ের উপর। তারপর এলোপাথাড়ি কোপ মারতে থাকে সে। ভুবনবাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই মারা গিয়েছেন ভেবে ধীর পায়ে বাজার ছাড়ে সে। ওই ঘটনায় হইচই পড়ে যায় বাজারে। প্রাণ ভয়ে যে যে দিকে পারেন পালাতে থাকেন। চোখের পলকে ফাঁকা হয়ে যায় বাজার। ঘটনাস্থলে পুলিশ এলেও আতঙ্কে কেউই পুলিশের কাছে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।

Advertisement

তবে ওই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পুলিশের দিকেই। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাজারের মধ্যে রমরমিয়ে চলছে মদের ঠেক। পুলিশকে বারবার বলেও ঠেক বন্ধ হয়নি। তাঁদের অভিযোগ, সুতি থানার এক এএসআইয়ের সেখানে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। সেই খাতিরেই জাঁকিয়ে বসেছে মদের ঠেক। তাতেই ভরা বাজারের মধ্যেই দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বাড়ছে। পুলিশ সুপার সি সুধাকর অবশ্য বলেন, ‘‘পলাতক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের মামলার বিচার চলছে। তাকে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন