‘আলোয় ফেরা’ নাটকের একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র
নেশার গ্রাসে ডুবে গিয়েছিল জীবন। ভবিষ্যতের পথে তখন শুধুই অন্ধকার। মাদকের গ্রাসে পড়া রানাঘাটের কয়েক জন যুবককে বছর পাঁচেক আগে নেশা ছাড়ানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল কলকাতায়। টানা চিকিৎসা চলেছিল। দুঃস্বপ্নের মতো ছিল সেই পর্ব। তাঁরাই জানিয়েছেন, প্রতি মুহূর্তে মনে হত, আর পারবেন না। মাঝপথে হয়তো ফিরে যেতে হবে। শেষ পর্যন্ত জয় করতে পেরেছিলেন নেশাকে। ফিরেছিলেন সুস্থ জীবনে। তখনই একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তাঁদের মতোই মাদকের জালে আটকে পড়া মানুষদের যতটা সম্ভব সুস্থতায় ফেরানোর চেষ্টা করবেন।
এর পরই তাঁরা তিন-চার জন মিলে রানাঘাটেই তৈরি করেছিলেন পুনর্বাসন কেন্দ্র। গত তিন বছর ধরে সেখানে মাদকাশক্তদের সুস্থ করে তোলার কাজ হচ্ছে। আপাতত ওই কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন ৩৩ জন। মঙ্গলবার বিশ্ব মাদক বিরোধী দিবসে পুলিশের পক্ষ থেকে আরও দশ জন মাদকাশক্তকে ওই কেন্দ্রে পুনর্বাসনের জন্য ভর্তি করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “কোনও দরিদ্র মাদকাশক্তের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ভার এক জন আর্থিক ভাবে সক্ষম মানুষ নিলে তাঁদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কারণ, এই প্রক্রিয়ায় ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। একটি ছেলেকে সুস্থ করে যে মানসিক শান্তি পাবেন, সেটা অন্য কোনও ভাবে সম্ভব নয়।”
ওই সংস্থার অন্যতম কাউন্সেলার সোমেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমি নিজেও এক দিন নেশগ্রস্থ ছিলাম। কলকাতার একটি সংস্থা থেকে সুস্থ হয়ে এসেছি। ভুক্তভোগী বলেই জেলায় এইরকম কেন্দ্র গড়তে চেয়েছিলাম, যাতে এখানকার লোককে কলকাতায় যেতে না-হয়। অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এখানে প্রতি মাসে খাওয়া, চিকিৎসা এবং ওষুধ বাবদ সাড়ে ছ’ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়।” তিনি আরও বলেন, “একমাত্র এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলেই মাদকাশক্ত ও তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের অবস্থা ও অসহায়তা বোঝা যায়। সেই কারনেই আমরা কিছু করতে চেয়েছিলাম।”
মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার রুপেশ কুমার, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার আজহার এ তৌসিফ, রানাঘাটের এসডিও প্রসেঞ্জিৎ চক্রবর্তী-সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ‘আলোয় ফেরা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে। এক সময় যাঁরা নেশাগ্রস্ত ছিলেন তাঁরাই নাটকটি লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন। যারা অভিনয় করছে তাদের অধিকাংশই এই প্রাক্তন নেশাগ্রস্তদের ছেলেমেয়ে। কিছু এমন অভিনেতাও রয়েছেন যাঁরা এখন নেশা ছাড়ানোর জন্য চিকিৎসাধীন। তাঁরা বলেন, “এ ভাবে সকলের সামনে নাটক করা তো দুরের কথা, আমার যে কখনও সুস্থ হব সেটাই কয়েক মাস আগে ভাবতে পারিনি।” তাঁদের অনেকের অভিভাবকই জানিয়েছেন, “নেশা করার জন্য এলাকার মানুষও ওদের ভাল চোখে দেখতেন না। মাদক কেনার টাকা জোগাতে বিভিন্ন অসামাজিক কাজের সঙ্গে ওরা যুক্ত হচ্ছিল। চিকিৎসা করার পর অনেক সুস্থ হয়ে ওঠেছে।”