নামেই জেলা হাসপাতাল। সামান্য হাড়ের অস্ত্রোপচার করতে হলেও সেই ‘রেফার’ রোগ জাঁকিয়ে বসে কৃষ্ণনগরের শক্তিনগরের জেলা হাসপাতালে।
দোলের দিন সকালে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় বাঁ পায়ের গোড়ালির হাড় ভাঙে ভীমপুরের নাইকুড়ার কিশোর সাগর বিশ্বাসের। প্রয়োজন ছিল অস্ত্রোপচার করে হাড় জোড়া দেওয়ার। কিন্তু জেলা হাসপাতালে সেই অস্ত্রোপচার করাই যায়নি। কারণ, এই দরণের অস্ত্রোপচারের জন্য জরুরী ‘সি-আর্ম’ যন্ত্রটিই নেই। তাঁকে সটান কলকাতা এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
সাগরের বাবা অশোক বিশ্বাস ‘অত দূর’ কলকাতায় আর আসেননি। তিনি বলছেন, ‘‘না জানি কলকাতায় গিয়ে আবার কী শুনতে হবে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই কৃষ্ণনগরের একটি নার্সিংহোমে ছেলেকে ভর্তি করি।’’ অস্ত্রোপচার আর চিকিৎসার জন্য অশোকবাবুর ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, সরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার নিখরচায় হত।
শুধু সাগরই নয়, হাড়ের অস্ত্রোপচারের রোগী এলেই রেফারই এই হাসপাতালের নিয়ম। চিকিৎসকরা বলছেন, সি-আর্ম ছাড়া হাড়ের অস্ত্রপচার করাই যাবে না। ওই যন্ত্রের সঙ্গে ক্যামেরা থাকে। তা দেখেই অস্ত্রোপচার করা হয়। এই যন্ত্রের দাম ১৫-২০ লক্ষ টাকা।
জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, “হাড়ের জটিল অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে আমরা কলকাতায় রেফার করি।” তিনি জানান, ওই যন্ত্র চেয়ে স্বাস্থ্যদফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জেলায় কল্যাণীতে মেডিক্যাল কলেজ থাকতে কলকাতায় রেফার কেন? শচীন্দ্রনাথবাবু জানান, এনআরএস-এর পরিকাঠামো ভাল। জেএনএম হাসপাতালের সুপার সুবিকাশ বিশ্বাস অবশ্য জানান, এই হাসপাতালের পরিকাঠামো যথেষ্ট ভাল।
শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের অস্থি বিভাগের চিকিৎসক শঙ্কর রায়ের অধীনে সাগরকে ভর্তি করানো হয়েছিল। তিনিই এনআরএসে রেফার করেন। তিনিই ফের শহরের একটি নার্সিংহোমে সাগরের অস্ত্রোপচার করেন। শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতালে ‘সি-আর্ম’ ছিল না বলেই রেফার করেছি। রোগীর বাড়ির লোকজনের অনুরোধেই নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার করেছি। যন্ত্রটা থাকলে অস্ত্রোপচার হাসপাতালেই করা হত।’’