আগ্নেয়াস্ত্র হাতে: সোমবার নওদায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
সকাল থেকেই খবর আসছিল বুথ দখলের। চাঁদপুর, কেদারচাঁদপুর, বালি-২ এ একের পর এক বুথ দুষ্কৃতীদের হাতে চলে যাচ্ছে। বিরোধীরা অভিযোগ করছিল, দুষ্কৃতীরা সব তৃণমূলআশ্রিত। তৃণমূলের নেতারাও নিতান্ত অহেলায় সেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে গিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদের নওদা পাটিকাবাড়ির সেই অর্থে রাজনৈতিক হিংসা বা খুনোখুনির অভিজ্ঞতা তেমন ছিল না। তবে, যখন খবর এল, গাড়ি বাহিনী নিয়ে দুষ্কৃতীরা সেখানেও বুথ দখল করতে আসছে, তখন অবাকই হয়েছিলেন গ্রামের লোক, ভয়ও পেয়েছিলেন। পাটিকাবাড়ি বেসিক স্কুলের বুথের দরজা আটকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সমর্থিত নির্দল প্রার্থী বিলকিস খাতুনের সহযোগী বছর সাতাশের শাহিন শেখ। তবে বেশিক্ষণ নয়, সত্যিই এসেছিল খান কয়েক গাড়ি। আর দরজা খুলেই হাত বিশেক দূর থেকে শাহিনকে ঝাঁঝরা করে ফের গাড়িতে উঠে ফিরে গিয়েছিল তারা।
বুকে-পেটে একাধিক গুলি নিয়ে নওদা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান শাহিন।
পাটিকাবাড়ি পঞ্চায়েত ছিল কংগ্রেসের দখলে। পরে বহু সদস্য দলবদল করায় জেলা পরিষদ ও গ্রাম পঞ্চায়েত চলে যায় তৃণমূলের হাতে। রাজনৈতিক মহলের খবর, তৃণমূলের ভিতরেই এখানে ফাটল ধরেছিল। বিক্ষুব্ঝ অংশের সমর্থনে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বিলকিস। তাঁর হয়ে প্রথম থেকেই ভোটে খেটেছেন শাহিন। তাঁর বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরেই বুথ। ফলে ভোর থেকে বুথে চলে গিয়েছিলেন শাহিন।
দুপুর দেড়টা নাগাদ খবর আসে, তৃণমূলের জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এবং নওদা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মুশারফ হোসেন মধু দলবল নিয়ে বুথ দখল করতে আসছেন। যদিও তৃণমূল সূত্রের খবর, সম্পূর্ণ মিথ্যা খবর রটাচ্ছে কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা নওদার বিধায়ক আবু তাহের খানের অবশ্য অভিযোগ, ‘‘মুশারফের বাহিনী চার-পাঁচটি গাড়ি নিয়ে বুথে ঢোকে। তার পর শাহিনকে লক্ষ্য করে গুলি করে।’’ যা শুনে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস বলেছেন, ‘‘অভিযোগ তো অভিযোগই। পুলিশ তদন্ত করুক।’’ খুনের পরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভোটারেরা বুথ ছেড়ে পালান। ঘটনাস্থলে থাকা বছর তেরোর এক বালকও দুষ্কৃতীদের গুলিতে আহত হয়েছে। এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘গ্রামে এক জন খুন হয়ে গেল ভাবতে পারছি না।’’