পঞ্চায়েত ভোটের ফল প্রকাশের পরে নানা মন্তব্যে ভরে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। তৃণমূলের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও বিভিন্ন মন্তব্যের ছড়াছড়ি। অনেক জায়গাতেই আত্মসমালোচনার সুর।
কেমন?
দলের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একজন লিখেছেন—কেন এই গেরুয়া ঝড়? নেতৃত্বের একাংশের বিলাসবহুল জীবনযাপনে ক্ষোভ বেড়েছে। দলের একাংশের প্রতিপত্তি বেড়েছে। পাশাপাশি রয়েছে সাংগঠনিক দুর্বলতাও। এক জন মন্তব্য করেছেন, ‘দলের কোনও নেতানেত্রীর সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রচুর টাকা খরচ করার বিষয়টিও ফলে প্রভাব ফেলেছে’। কেউ লিখছেন, ‘জেলা সভাপতি ভদ্র, বিচক্ষণ, উদার মানুষ। তাঁকে ঘিরে থাকা আগাছা সাফ করতে হবে।’ তৃণমূলের এক নেতা একটি গ্রুপে লিখেছেন— ‘আমার যদি ভুল হয়ে অন্যের কাছে সমালোচনা না করে সেটা আমাকে জানিও। মানুষ কখনও ব্যর্থ হয় না। হয় সে জিতবে, না হলে শিখবে।’ অন্য এক জন লিখেছেন— ‘আমার মাথা নত করে দাও...’।
পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, এই ভোটে বিজেপি জেলার জঙ্গলমহলে ভাল ফল করেছে। পুরুলিয়ার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূলের দখলে গিয়েছে ৬৩টি। বিজেপি পেয়েছে ৪৪টি। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে তৃণমূল শতাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত পেলেও পরবর্তীকালে ভোটের আগে পর্যন্ত জেলায় কমবেশি দেড়শো পঞ্চায়েতের দখল আসে শাসক দলের হাতে। সেখান থেকে কমে ৬৩তে নেমে আসা এবং বিজেপির শূন্য থেকে ৪৪-এ উঠে আসার ঘটনাকে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরাই গেরুয়া ঝড় হিসেবে দেখছেন।
পঞ্চায়েতে ভোট হওয়া ১৯২০ আসনের মধ্যে যেখানে তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে ৮৩৭টি আসন, সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৬৪৪টি। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রেও কার্যত একই ছবি। জেলার ২০টি পঞ্চায়েত সমিতির ৪৪৬টি আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে ৪৪১টিতে। বিজেপি গত বার একটিও আসন পায়নি। এ বার পেয়েছে ১৪২টি। জেলার চারটি পঞ্চায়েত সমিতির দখল নেওয়ার পাশাপাশি একাধিক ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত সমিতিতেও শাসক দলের ঘাড়ের কাছেই নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। জেলা পরিষদেও শূন্য থেকে তারা পৌঁছেছিল ১০-এ। পরে কমে হয় ৯।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন পোস্ট দেখে দলের এক পুরনো নেতার মন্তব্য, ‘‘যাঁরা দলকে ভালোবাসেন এই ফল তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। কষ্ট হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করছেন উন্নয়নের জন্য। পালাবদলের পরে তো জেলায় অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু নেতৃত্বের একাংশের ঔদ্ধত্য ও দুর্নীতি এবং কর্মীদের মর্যাদা না দেওয়ার বিষয়টি এই ফলে প্রতিফলিত হয়েছে।’’
দলের জেলা সম্পাদক নবেন্দু মাহালি অবশ্য বলছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যাঁরা মন্তব্য করছেন সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমরা গোটা জেলার বুথ ভিত্তিক ফলের পর্যালোচনা করব।’’