দুর্গন্ধে নাকে কাপড় গুঁজে চলতে হয় পথচারীদের। — নিজস্ব চিত্র
•শহরে খেলাধূলার জন্য একটা স্টেডিয়াম আছে। তার কাজ আজও শেষ হল না। নামমাত্র গ্যালারি। তার মধ্যে একটির অবস্থা ভাল নয়। পুরসভাকে বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। আমরা কী ধরে নেব, এ ব্যাপারে পুরসভার তেমন কোনও আগ্রহ নেই?
অরুণাংশু রায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ড
আমরা সবসময় চাই শহরে একটা ভাল স্টেডিয়াম তৈরি হোক। স্টেডিয়ামের জন্য ৯৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। জেলা পরিষদের স্টেডিয়ামের কাজ করেছিল। ওই ৩০ লক্ষ টাকার হিসাব দিয়ে দিতে পারলে, বাকি ৬৮ লক্ষ টাক পাওয়া যাবে। কিন্তু জেলা পরিষদ সেই হিসাব না দেওয়ায় বাকি টাকা পাওয়া মেলেনি। যার ফলে কাজ শেষ হয়নি।
•দিনে দিনে শহরে টোটোর সংখ্যা বাড়ছে। যার ফলে বড়গাড়িগুলোর আয় কমছে। তারপর শহরে ট্রেকার চলতে শুরু করেছে। ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। এ ব্যাপারে পুরসভার সেরকম কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
রাজু দেবনাথ, ১ নম্বর ওয়ার্ড
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরে যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে। এক সময় শুধু ভ্যান ও রিকশা ছিল। পরিবহণ ব্যবস্থা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এখন অনেক কিছুই হয়েছে। শহরে টুকটুকের সংখ্যাও বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে কি করা যায়, তা বিবেচনা করে দেখব।
•যত দিন যাচ্ছে শিক্ষার হার বাড়ছে। এখানকার দু’একটি হাইস্কুলে পড়ুয়ারা ভাল ফল করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরে কোনও কলেজ নেই। এই কারণে পড়ুয়াদের রানাঘাট, শান্তিপুর বা বগুলায় ছুটতে হয়। মাঝে-মাঝেই শুনি কলেজ হচ্ছে। কিন্তু, কোনও কিছুই তো চোখে পড়ছে না। এ বিষয়ে পুরসভা কিছু করার নেই?
অমিত ঘোষ, ২ নম্বর ওয়ার্ড
কলেজ তৈরি করতে গেলে ৯ বিঘা জমির প্রয়োজন। সেই জমি পাওয়া গিয়েছে। কলেজে পড়ানোর জন্য ৫৬ জন আংশিক শিক্ষকের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এ বার বাকি কাজ শুরু হবে। আমার এই শহরের পড়ুয়াদের উচ্চ শিক্ষার কথা ভেবে কলেজ অবশ্যই তৈরি করব।
•ভোটের পর বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখানো হয়েছিল। এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর থেকে শহরকে রক্ষা করার জন্য পুরপ্রধান কি করছেন, তা জানতে পারলে ভাল হয়।
পার্থ বিশ্বাস, ৫ নম্বর ওয়ার্ড
দীর্ঘ ৩৪ বছর আমি এই শহররে জন প্রতিনিধি। চোখের সামনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছি। যারা হটকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা কেউ টেকেননি। যাঁরা এ সব করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। আমার শহরের শান্তি রক্ষায় সকলের পাশে আছি।
•পুরসভার ২, ৩ এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ড রেল লাইনের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। যার কারণে যোগাযোগের সমস্যা হচ্ছে। সেখানে সাবওয়ে বা রেলগেট কিছু নেই। যার কারণে ওই সব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দুশিন্তায় দিন কাটে। সমস্যার সমাধানের জন্য পুরসভা কী কিছু ভাবছে?
গোবিন্দ কুর্মী, ৪ নম্বর ওয়ার্ড
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুরসভার কিছু করার নেই। আমি বিষয়টি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বার কয়েক আলোচনা করেছি। তারা যে কথা বলেছেন, তা মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তার বলেছে, রেল গেট করতে পুরসভাকে ৭০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। এ ছাড়াও, তা পরিচালনা করার জন্য টাকা দিতে হবে। এই টাকা আমদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এটুকু বলতে পারি, রেলগেট বা সাবওয়ে করার দাবিতে ওই সব এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করব।
•দক্ষিণপাড়া এলাকায় সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য একটি মুক্তমঞ্চের প্রয়োজন। মাঝেমাঝে শুনতে পাই, সেখানে মুক্তমঞ্চ হবে। কিন্তু, তেমন কিছু তো চোখে পড়ছে না। বিষয়টি নিয়ে পুরসভা কি ভাবছে, জানতে পারলে খুশি হতাম।
সুব্রত সাহা, ১ নম্বর ওয়ার্ড
মাস সাতেক আগে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে একটি প্রস্তাব এসেছিল। সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। সেটা তৈরি করার সব রকমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
•শহরে কোথাও কোথাও সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়েছে। কিন্তু তা খুবই সামান্য। এই শহরে এ ব্যাপারে অনেক কিছুই করা যেতে পারে। পুরসভা কী এ ব্যাপারে কিছু ভাবছে?
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, ৬ নম্বর ওয়ার্ড
শহরের ১৪টি ওয়ার্ডে ১৩টি ছোটদের জন্য পার্ক করা পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১১টির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলোও করা হবে। খুব সহজেই বলা যায়, রাস্তার ধারে হওয়ায় এগুলো শহররে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এ ছাড়াও, শহরের বিভিন্ন জায়গায় মণীষীদের মূর্তি বসানো হয়েছে। পুকুরগুলিকোকে ঘিরেও সৌন্দার্যায়নের ভাবনা চিন্তা রয়েছে।
•বীরনগর পুরসভা তৈরির আগের থেকে শহরে মাতৃসদন হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও চিকিৎসা মেলে না একথা বলা ঠিক হবে না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে উন্নত ধরনের পরিষেবা দরকার, তা মেলে না। এটা হলে শুধু শহরের মানুষই নয়, আশপাশের কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ এতে উপকৃত হবে। এই হাসপাতালকে ঘিরে পুরসভার তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। উদ্যোগ নিলে অবশ্যই আমরা উপকৃত হব।
প্রসেনজিৎ রায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ড
•হাসাতলের উন্নয়নের জন্য সব রকমের চেষ্টা করছি। সরকার চাইছে এ ধরনের শহরে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন হোক। আমরা সেই কারণে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। শহরবাসীর কথা ভেবে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মানুষের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে পৌঁছে দেওয়ার ভাবনা শুরু হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ রয়েছে, সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে চলেছেন।
পুরসভার ৯-১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁতের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার মানুষ আর্থিক অনটনে ভোগেন। তাঁদের জন্য পুরসভার কোনও উদ্যোগ নিয়েছে কী?
গোবিন্দ কুর্মী, ৪ নম্বর ওয়ার্ড
•এ বিষয়ে পুরসভার সরাসরি কিছু করার নেই। ওই সব তাঁতশিল্পীরা প্রতিযোগিতার টিকে থাকতে পারেন, সে জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ২০০ জনকে বিনামূল্যে তাঁত দেওয়া হয়েছে। আরো ৫০০ জনকে তাঁত দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁরা যাতে আর্থিক সাহায্য পান, সে জন্যও চেষ্টা চলছে।
শহরের বহু পরিবার আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। মহিলাদের জন্য কিছু করা হলে পরিবারগুলো উপকৃত হবে। তার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে পুরসভা কী ভাবছে?
সমীর রায়, ৯ নম্বর ওয়ার্ড
•রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন মহিলাদের উন্নয়ন ঘটাতে। তাদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে সব কাজ শেষ করতে চাননি। তাদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকী, সে সংস্থা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, বলা হয়েছে শতকরা ৪০ ভাগ মহিলাকে যুক্ত করতে হবে।
•শহরের কোথাও কোথাও জঞ্জাল পড়ে থাকতে দেখা যায়। তা অপসারণের জন্য পুরসভার তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পরে না। এ বিষয়ে পুরসভার কিছু চিন্তা ভাবনা করছে কি?
তপন চক্রবর্তী, ২ নম্বর ওয়ার্ড
ভাবনা চিন্তা অনেক কিছু থাকলেও, জায়গার অভাবে তেমন কিছু করা যাচ্ছে না। একটা ডাম্পিং গ্রাউন্ড করা দরকার। তার জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। সেটা পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। রানাঘাট, তাহেরপুর নোটিফায়েড এবং বীরনগর পুরসভাকে নিয়ে একটা বড় পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একটা জায়গায় জঞ্জাল ফেলে তা থেকে সার ও গ্যাস তৈরি করা হবে।
•১৯ বিঘার আমবাগান নিয়ে শহরে একটা ভাল ধরনের পার্ক তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। সেটি কি আদৌও হবে?
তাপস দাস, ৯ নম্বর ওয়ার্ড
সেখানে বড় ধরনের ভাবনা চিন্তা রয়েছে। প্রথমে সেই জায়গায় চারিদিকে প্রাচীর দেওয়া হবে। আয়ুর্বেদিক গাছ চাষ করা হবে। পিকনিকের ব্যবস্থা করা হবে। এমনকী বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের কথা ভেবে সেখানে রিসর্ট, প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং মিটিংয়ের জায়গা করা হবে, দূর থেকে মানুষকে এখানে নিয়ে আসাই হবে আমাদের মূল কাজ।
•শহরে অনেক পরিবারের মাথার উপর ছাদ নেই। তাঁদের জন্য কী ভাবছেন?
রাজু দেবনাথ, ১ নম্বর ওয়ার্ড
গরীবদের ঘর বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত প্রায় ২৬৪টি পাকা ঘর তৈরি করে দিতে পারব।
•চণ্ডীতলা থেকে পাহাড়পুর যাওয়ার রাস্তার হাল খারাপ। বর্ষার সময় তো ওই রাস্তা দিয়ে চলাফেরাই করা যায় না। রাস্তাটি সারাইয়ের ব্যাপারে পুরসভার কী পরিকল্পনা রয়েছে?
সোমেশ্বর দাস, ১ নম্বর ওয়ার্ড
ওই রাস্তার পুরোটা পুরসভার মধ্যে পড়ে না। তাই আমরা রাস্তাটি সংস্কার করতে পারব না। জেলা পরিষদকে বিষয়টি দেখতে হবে।
•শহরের অনেক জায়গায় লাইট জ্বলে না। সেখানে বিদ্যুতের ভোল্টেজ কম থাকে। ওই সব জায়গায় এলইডি আলোর ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।
প্রশান্ত বিশ্বাস, ৫ নম্বর ওয়ার্ড
শহরের সাতটা জায়গায় টাওয়ার লাইট রয়েছে। সেখানে কোনও সমস্যা নেই। কিছু জায়গায় ভোল্টেজ কম থাকার কারণে আলো জ্বলছে না। সে সব জায়গায় কম ভোল্টেজে জ্বলার মতো আলোর ব্যবস্থা করা হবে।
•শহরের নিকাশির হাল ভাল নয়। অনেক জায়গায় জল জমে থাকে। এ ব্যাপারে আপনার ভাবনা কী?
অরুণাংশু রায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ড
শহরে ৮৪টি নালা রয়েছে। তবু নিকাশীর সমস্যা পুরোপুরি যায় নি। শহরের অতিরিক্ত জল পরিস্রুত করে তা নদী বা খালে ফেলতে না পারলে সমস্যাটা থেকেই যাবে। আমরা তা করার চেষ্টা করছি।
•চণ্ডীতলা একটা ঐতিহাসিক স্থান। সেখানে অনেকেই বেড়াতে আসেন। ওই জায়গায় স্নানাগার ও জলের ব্যবস্থা করতে পারলে ভাল হয়।
সুব্রত সরকার, ১ নম্বর ওয়ার্ড
নাগারিকদের তরফে লিখিত প্রস্তাব এলে বিষয়টি ভাবব।
•সকালের দিকে বীরনগর স্টেশনে সব ট্রেন থামে না। পুরসভা বিষয়টি দেখলে ভাল হয়।
সুমন বিশ্বাস, ১২ নম্বর ওয়ার্ড
বিষয়টি নিয়ে রেল দফতরের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। বিষয়টি রেলযাত্রী সমিতির মাধ্যমে বিষয়টি রেলের কাছে গেলে ভাল হয়।
•বৃদ্ধদের বিনোদনের জন্য কোনও স্থান নেই। এ নিয়ে পুরসভা কী ভাবছে?
গোবিন্দ কুর্মী, ৪ নম্বর ওয়ার্ড
শহরের দু’টি জায়গা চিহ্নিত করেছি। সেখানে বৃদ্ধদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে।
•টোটোর কোনও স্ট্যান্ড নেই। ফলে যানজট হয়। পুরসভা কী ভাবছে?
তপন দাস, ৩ নম্বর ওয়ার্ড
বিষয়টি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে। রেলের জায়গায় একটা স্টান্ড বানানোর জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তা পেলে সেখানে স্ট্যান্ড তৈরি করা হবে।
•সব ওয়ার্ডে পানীয় জল মেলে না। জল কিনে খেতে হয়। পুরসভার ভাবনা কী?
জামাত মণ্ডল, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড
ন’টি নলকূপের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। তবু কোথাও জল না পৌঁছলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।