বেলুন ভুলে চোখ যাচ্ছে কেকে

কাঠের বেঞ্চে সার দেওয়া লাল-নীল মোমবাতি। রুপোলি বাটিতে নলেন গুড়ের পায়েস। ঝলমলে পেতলের থালায় চন্দনের বাটি, ছড়ানো দুব্বো।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:০০
Share:

স্কুলেই জন্মদিন: বেলডাঙায়। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

ওদের সক্কলের জন্মদিন।

Advertisement

কাঠের বেঞ্চে সার দেওয়া লাল-নীল মোমবাতি। রুপোলি বাটিতে নলেন গুড়ের পায়েস। ঝলমলে পেতলের থালায় চন্দনের বাটি, ছড়ানো দুব্বো। রাঙতার টুপি উঠেছে সকলের মাথায়। ঘরের এ মুড়ো ও মুড়ো উড়ছে বাহারি বেলুন। তবে থেকে থেকেই ওদের চোখ চলে যাচ্ছে যার দিকে ক্লাশ ঘরের মাঝখানে রাখা সেই আস্ত কেকটাও বেশ সেজেগুজে উঠেছে।

ওরা একা নয়, আজ, ওদের বাবা-মায়েরাও এসেছে স্কুলে। তাঁদের সলজ্জ অংশগ্রহণও অনুষ্ঠানে একটা মাত্রা যোগ করেছে বইকি! অন্য দিনের মুসুর ডাল- আলুর তরকারিকে টা টা করে এ দিন দুপুরে রীতিমতো মাংস। শেষ শীতে স্কুলটা যে একেবারে অন্যরকম লাগছে। কী ব্যাপার?

Advertisement

বেলডাঙার আণ্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার, রীতিমতো ধুম করে জন্মদিন হচ্ছে স্কুলের পনেরো জন ছেলেমেয়ের। যাদের জন্মদিন ছিল এ মাসেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্ত বলছেন, ‘‘নিজের জন্মদিনটা ছেলেমেয়েদের একটা বিশেষ দিন। কিন্তু অনেকেই হয়ত, বাড়িতে পায়েসটুকুও করতে পারছেন না। আমরা তাই ঠিক করেছি, মাসের শেষ দিনে, সক্কলের এক সঙ্গে জন্মদিন পালন করব এ বার থেকে।’’

প্রতি মাসেই এ জন্মদিনের অনুষ্ঠান থাকবে। স্কুলে আসার সেটাও একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে ছেলেমেয়েদের কাছে, এমন মনে করছেন শিক্ষকেরাও। খরচের সিংহভাগ শিক্ষকেরাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বাকিটা, অভিভাবকেরা যে যা দিতে পারবেন। এ দিন তাই, যে পনেরোটি শিশুর জন্মদিন ছিল নেমন্তন্ন ছিল সেই অভিভাবকদেরও।

এ দিন জন্মদিন ছিল, প্রাক প্রাথমিকের অবিনাশ হালদার, দ্বিতীয় শ্রেণির আলো সরকারের। তারা আদুরে গলায় বলছে, ‘‘বাড়িতে তো কোনও দিন জন্মদিন হয়নি। জন্মদিনে যে এমন হয়, জানতামই না। আজ খুব মজা হয়েছে, স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে। খুব হইচই করেছি।’’

এক অভিভাবক কান্না চেপে বলছেন, ‘‘বাড়িতে তো ওর জন্য কখনও কেক আনা হয় না। জন্মদিনে বড়জোর পায়েস করি। এ বার তা-ও করতে পারিনি। মাস্টারমশাইরা সেই দুঃখটা ভুলিয়ে দিলেন।’’ অরবিন্দ হালদারও এসেছিলেন তাঁর ছেলের জন্মদিনে। কোনও রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘বাড়িতে এই ভাবে জন্মদিন পালনের ক্ষমতা আমাদের নেই। ফলে স্কুলের উদ্যোগে আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। স্কুলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন