পুকুর ভরাট করে ফ্ল্যাট, অভিযুক্ত বিজেপি নেতা 

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন, তাই যদি হয়, তা হলে গত ছ’মাস ধরে রঘুনাথগঞ্জে এক বিজেপি নেতা পাঁচ তলা ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করছেন কী করে? পুর কর্তৃপক্ষ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের লোকজনই বা এত দিন কোনও ব্যবস্থা নেননি কেন?

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০১
Share:

এই পাঁচ তলা নির্মাণ ঘিরেই অভিযোগ। রঘুনাথগঞ্জে।

পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, “আমাদের তরফে কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি।” ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারাও কবুল করছেন, ‘‘বেআইনি ভাবে পুকুর ভরাট করে চলছে নির্মাণ।”

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন, তাই যদি হয়, তা হলে গত ছ’মাস ধরে রঘুনাথগঞ্জে এক বিজেপি নেতা পাঁচ তলা ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করছেন কী করে? পুর কর্তৃপক্ষ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের লোকজনই বা এত দিন কোনও ব্যবস্থা নেননি কেন?

অভিযোগ, বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলার সহকারী সভাপতি তথা জেলার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সুধনচন্দ্র দাস পেশায় প্রোমোটার। তিনি পুকুর ভরাট করে পাঁচ তলা ফ্ল্যাট নির্মাণ করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা দফায় দফায় অভিযোগ জানিয়েছেন পুরসভা ও প্রশাসনের কাছে। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। নির্মাণের কাজ এগিয়েছে তরতরিয়েই।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮ শতকের এই পুকুরটি রয়েছে দীর্ঘ দিন থেকে। আগে পুকুরে মাছ চাষ হত। বছর ছ’য়েক আগে পুকুরটি কিনে নেন কয়েক জন। সেই থেকেই সেটি বুজিয়ে ফ্ল্যাট তৈরির চেষ্টা চলছিল। এলাকার বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক অম্বুজাপদ রাহা বলছেন, “ওই প্রোমোটর ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন মাস ছ’মাস আগে। ইতিমধ্যেই পাঁচ তলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষ। পুকুরের প্রায় ১০ ফুট বুজিয়ে বাড়ানো হয়েছে বাড়ি তৈরির এলাকা। বার বার অভিযোগ করেও বন্ধ হয়নি বেআইনি নির্মাণ। ”

ওই পুকুরের পাশেই রয়েছে রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুল। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সান্ত্বনা মুখোপাধ্যায় বলছেন, “স্কুলে তিন হাজার পড়ুয়া রয়েছে। মিডডে মিল রান্না হয়। যে কোনও সময় আগুন লেগে গেলে পাশের এই জলাশয়ই একমাত্র ভরসা। গলির মধ্যে এ ভাবে এত উঁচু বাড়ি থাকলে যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে। স্কুলের পক্ষ থেকেও অভিযোগ জানানো হয়েছে প্রশাসনের কাছে।”

তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত জঙ্গিপুর পুরসভার পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “ওই বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে তিন তলা পর্যন্ত। গিয়ে দেখে এসেছি নির্মাণ হয়েছে পাঁচ তলা। এটা বেআইনি।”

কিন্তু সব জেনেও পুরসভা তা হলে নীরব কেন? পুরপ্রধানের বক্তব্য, ‘‘আমি দু’দিনের মধ্যেই ব্যবস্থা নেব।” ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলছেন, “জলা বুজিয়েই তৈরি হচ্ছে বাড়িটি। বুধবারেই বাড়ির মালিককে নোটিস পাঠানো হচ্ছে।” বিজেপি নেতা সুধনচন্দ্র দাসের বক্তব্য, “তিন তলার অনুমতি পেয়েছি। বাকি দোতলার জন্যও পুরসভার কাছে অনুমতি চেয়েছি। অনুমতি পেয়ে যাব আশা করেই তা তৈরি করা হয়েছে। তবে জলাশয় বোজানো হয়নি।”

বিজেপির জেলা সভাপতি সুজিত দাস বলেন, “কমিটি যখন তৈরি হয় তখন বিজেপি করতেন সুধনবাবু। এখন পদে থেকে গিয়েছেন তাই আছেন। দলের সঙ্গে সেই অর্থে কোনও যোগাযোগ নেই। সাংগঠনিক নির্বাচন হচ্ছে দলে। দলের কোনও পদে তাঁর থাকার সম্ভাবনাও আর নেই। তিনি প্রোমোটরির ব্যবসা করেন। তাই তাঁর কোনও কাজের দায় দল নেবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন