বিজেপির দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সভাপতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। শো-কজের চিঠি এবং মানহানির মামলার জোড়া গুঁতোয় নিঃশর্তে ক্ষমা চাইতে হল দলের সেই কিসান মোর্চার জেলা সভাপতি নিশীথ বিশ্বাসকে।
সম্প্রতি শান্তিপুরে দলের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ করে হইচই ফেলে দিয়েছেন তৃণমূলের কুমারেশ চক্রবর্তী। কিন্তু নিশীথ পিছু হটলেন।
গত সেপ্টেম্বরে ফুলিয়ায় বিজেপির দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার কার্যকারিণী বৈঠকে সভাপতি জগন্নাথ সরকার এবং তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর বিবাদ বাধে। দলের রাজ্য নেতা মনোজ বিশ্বাসের সামনেই হাতাহাতি বেধে যায়। দলের জেলাস্তরের বেশ কিছু নেতা নিগৃহীত হয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
বিজেপির কিসান মোর্চার জেলা সভাপতি নিশীথ এই গোলমালের দায় চাপান জগন্নাথের উপরেই। তাঁর অভিযোগ ছিল, জেলার বেশ কিছু পদাধিকারীকে সরিয়ে নতুন কমিটি তৈরির চেষ্টা করছেন জেলা সভাপতি। মূলত তা নিয়েই সে দিন বিবাদ শুরু হয়। মাঝপথেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান বেশ কয়েক জন। পরে নিশীথ অভিযোগ করেন, জেলা সভাপতির উস্কানিতেই তাঁরা নিগৃহীত হয়েছেন।
কিন্তু শুধু এখানেই থেমে থাকেননি নিশীথ। রানাঘাট ১ ব্লকের হবিবপুর পঞ্চায়েতের বোর্ড হাতছাড়া হওয়ার জন্য জগন্নাথকে দায়ী করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ ছিল, ২২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জগন্নাথ হবিবপুরের বোর্ড তৃণমূলের হাতে তুলে দিয়েছেন। নিশীথের বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষ টাকার মানহানির মামলার নোটিস পাঠান জগন্নাথ। এর পরেই লিখিত ভাবে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন নিশীথ।
শুক্রবার নিশীথ বলেন, “সে দিন যা বলেছিলাম, তার কোনও প্রমাণ আমার কাছে নেই। বৈঠকে ঝামেলায় আমিও আক্রান্ত হই, তখনই উত্তেজিত হয়ে এ সব কথা বলে ফেলেছিলাম। আমি জেলা সভাপতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।” কিন্তু দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে না বলে প্রমাণ ছাড়া এই অভিযোগ কেন সংবাদমাধ্যমের কাছে করেছিলেন তিনি, তার সদুত্তর মেলেনি। নির্দিষ্ট করে ২২ লক্ষ টাকা অঙ্কটা কোথা থেকে এল, তার ব্যাখ্যাও মেলেনি।
পঞ্চায়েত ভোটের ফলের নিরিখে ত্রিশঙ্কু হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বৃহত্তম দল ছিল বিজেপি। কিন্তু দুই সিপিএম সদস্যের দলবদলের জেরে বোর্ড চলে যায় তৃণমূলের হাতে। এই নিয়ে ওই এলাকার নিচুস্তরে জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে অনেকেই এ নিয়ে ক্ষোভও জানান। তবে তৃণমবল বা আর কারও কাছ থেকে তাঁর টাকা নেওয়ার অভিযোগ নিশীথ ছাড়া আর কেউ করেননি।
জগন্নাথ এ দিন বলেন, “সত্যিটা প্রকাশ হল। আমার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ যে ভিত্তিহীন, তা প্রমাণিত হল। মানসিক যন্ত্রনার মধ্যে ছিলাম। নিশীথ নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছে। আমিও ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”