—ফাইল চিত্র।
এক দিকে দলীয় শৃঙ্খলা আর অন্য দিকে প্রায় ঘাড়ের উপরে চলে আসা বিধানসভা ভোট। দুইয়ে মিলিয়ে উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতির নিগ্রহের পরে গোটা দিন পেরিয়ে গেলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারল না বিজেপি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছেও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
দলের নেতাকর্মীরাও এই নিয়ে যথেষ্ট দোলাচলে। একাংশের মতে, এখনই কড়া ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে দলের শৃঙ্খলরক্ষা করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। আর এক অংশের আশঙ্কা, দলের তরফে এফআইআর বা কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই বিক্ষুব্ধ অংশ তৃণমূলের ঝান্ডার তলায় আশ্রয় নিতে পারে। তাতে আখেরে আরও বড় ক্ষতি হবে।
বৃহস্পতিবার মূলত কৃষ্ণনগর দক্ষিণ, নবদ্বীপ ও তেহট্ট, বিধানসভা এলাকার নেতাকর্মীরা মণ্ডল সভাপতি বদলের প্রতিবাদ করতে এসেছিলেন কৃষ্ণনগরে সদর কার্যালয়ে। সেই সময়ে দলীয় কার্যালয়ের ভিতরেই সভাপতি আশুতোষ পালের উপরে হামলা হয়। তাঁকে মারধর করে জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এর বিহিত করতে গেলে উল্টো ফল হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। কেননা জেলার ৩৫টি মণ্ডলের মধ্যে এখনও আশু-বিরোধী গোষ্ঠীর সভাপতির সংখ্যা বেশি। কোনও ব্যবস্থা নিতে গেলে সেই সব মণ্ডলেও বিদ্রোহ হতে পারে। ফলে কার্যত দ্বিধাগ্রস্ত বিজেপি নেতৃত্ব।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই নিগ্রহ এবং তার পর কৃষ্ণনগরের রাস্তায় দলের ঝান্ডাকে ডান্ডা করে দু’পক্ষের মারপিটের মধ্যেই কৃষ্ণনগর শহরে ঢুকে গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁকে আর দলীয় কার্যালয়ে না নিয়ে গিয়ে সোজা আসাননগরে সভাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মণ্ডল সভাপতির বাড়িতে কিছু ক্ষণ থেকে আসাননগর বাজারে জনসভায় যান তিনি। পরে ছেঁড়া জামার উপরে ‘মোদি কোট’ চাপিয়ে আসেন সেখানে এসে হাজির হন আশুবাবু। তাতেও পুরোপুরি ঢাকা পড়েনি জামার ছেঁড়া অংশ। ততক্ষণে রাজ্য সভাপতির কানে চলে গিয়েছে সবটাই। মঞ্চে পাশেই বসা আশুবাবুর সঙ্গে তাঁকে কথা বলতে কিন্তু দেখা যায়নি। যা দেখে দলের নেতাকর্মীদের একাংশের ধারণা, দল যে আশুবাবুর নিয়ন্ত্রণে নেই, গোটা ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে, সেটাই কার্যত বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন দিলীপ ঘোষ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই দলীয় কার্যালয়ে নদিয়া উত্তর সাংগনিক জেলার ‘কোর কমিটি’র সদস্যেরা বৈঠকে বসেন। দলীয় সূত্রের খবর, সেখানে কড়া অবস্থান পক্ষে-বিপক্ষে দুই রকম মতই আসে। শুক্রবার আশুবাবু বলেন, “জেলা ও রাজ্য এক সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” কী ধরনের পদক্ষেপ করা হতে পারে? তাঁর জবাব, “সেটা সাংগঠনিক বিষয়। আপনাকে কেন বলতে যাব?” তবে রাজ্য কমিটির সভানেত্রী তথা দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা পর্যবেক্ষক মাফুজা খাতুন বলছেন, “বিষয়টি নিয়ে জেলা সভাপতিকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। ফলে যা বলার তিনিই বলবেন।”