একে রক্তদান শিবির করার চল কমেছে। তার উপরে চড়া বৈশাখ। দুয়ে মিলে বড়সড় টান পড়েছে রক্তের ভাঁড়ারে।
মুর্শিদাবাদে প্রতি মাসে রক্তের চাহিদা প্রায় দেড় হাজার ব্যাগ। সেখানে শিবির থেকে গড়ে চারশো ব্যাগের বেশি রক্ত মিলছে না। রক্তের ওই অভাব মেটাতে কখনও থানার ওসি, কখনও রেলপুলিশের কর্মীদের রক্ত দিতে হচ্ছে।
গত বছর বিধনসভা ভোটের আগে ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত মজুত করতে নিজেরা শিবির করেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মীরা। কয়েক মাসের মধ্যে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল রক্তদান শিবির করে। এত কিছু সত্ত্বেও রক্তের আকাল মিটছে না। জেলা ব্লাডব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা জানান, ডেপুটি সিএমওএইচ-২ কল্যাণরঞ্জন মুখোপাধ্যায়কে অনুরোধ করে একটি ক্যালেন্ডার করা হয়েছে যাতে জেলার প্রতিটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা শিবির করেন।
কয়েক দিন আগেই রক্তের আকাল দেখা দিয়েছিল নদিয়ায়। আপাতত তা একটু সামলেছে। কিন্তু গরম বাড়লেই রক্তের জোগানে টান পড়বে নিশ্চিত ভাবেই। কেননা গরমে অনেক শিবির বাতিল হয়ে যায়। শিবির করা গেলেও রক্তদাতার সংখ্যা অনেক কম হয়। আর একটা বড় সমস্যা, ব্লাড ব্যাঙ্কের হাতে রক্ত থাকলেও তা পরীক্ষা না হওয়া। ইতিমধ্যেই এ কারণে রক্ত না পেয়ে বেশ কিছু রোগীর বাড়ির লোকেদের ফিরতে হয়েছে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “কখনও কখনও বিশেষ গ্রুপের রক্তের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমরা জরুরি ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি।”
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল বলেন, ‘‘রোগীর বাড়ির লোকজনকে ‘ডোনার’ সঙ্গে করে নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে। তবে শিবির থেকে সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষা করে রোগীর বাড়ির লোকজনকে দেওয়ার সময়ে খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অনেক সময়ে রক্ত প্রয়োজন বলে লিখে দেয়। পরে দেখা যায় ওই রক্ত লাগেনি।’’
এই পরিস্থিতিতে রক্ত পাচ্ছেন না থ্যালাসেমিয়া রোগীরাও। মুর্শিদাবাদে নথিভুক্ত রোগীর সংখ্যা ৬৬৫। প্রতি মাসে তাঁদের জন্য গড়ে ২৫০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু শিবির না হলে তাঁরাও রক্ত পান না। রবিবার এক বেসরকারি সংস্থা শিবিরের আয়োজন করে। রেলপুলিশের কর্মীরা সেখানে রক্ত দিয়েছেন। বহরমপুর জিআরপি থানার ওসি জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ‘‘গরমে তৈরি হওয়া অভাব মেটাতেই পুলিশকর্মীরা রক্ত দিয়েছেন।’’
বাম আমলে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফ ক্যালেন্ডার করে সারা বছর রক্তদান শিবির করত। তারা হীনবল হয়ে পড়ার পরে এখন তা প্রায় ইতিহাস। ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক জামির মোল্লা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমাদের শিবির কমার জন্য রাজ্য সরকারের উদাসীনতাই দায়ী। শিবির করতে হলে মাসে মাসে জানাতে হচ্ছে। দিন ঘোষণার পরেও চিকিৎসক-নার্সের অভাবে রক্তদান শিবির বাতিল হয়ে যাচ্ছে।’’