Krishnanagar

গাড়ি ভাড়া করে রাতেই রক্তদান

রক্তের অভাব হলে শোনডাঙার বাসিন্দা বছর তিরিশের সমিতা বিবিকে বাঁচানোই যে কঠিন হয়ে পড়বে, চিকিৎসক রোগীর পরিবারের কাছে তা-ও খোলসা করেন।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২০ ০১:৩০
Share:

রক্ত দিচ্ছেন কাঞ্চন। নিজস্ব চিত্র

পেটে টিউমারের কারণে মহিলার জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করতে হবে, বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়ে দেন চিকিৎসক। শরীরে হিমোগ্লোবিন কম থাকায় তার আগে রোগীকে রক্ত দিতে হবে, জানান সেটাও। রক্তের অভাব হলে শোনডাঙার বাসিন্দা বছর তিরিশের সমিতা বিবিকে বাঁচানোই যে কঠিন হয়ে পড়বে, চিকিৎসক রোগীর পরিবারের কাছে তা-ও খোলসা করেন। কিন্তু ব্লা়ড সেন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সেই মুহূর্তে নির্দিষ্ট ওই গ্রুপের রক্ত নেই।

Advertisement

এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে দিশেহারা হয়ে পড়ে সমিতা বিবির পরিবার। এত রাতে কোথায় রক্ত মিলবে, তা নিয়ে শুরু হয় ভাবনাচিন্তা।

অত রাতে হাসপাতালে এসে রক্ত দিয়ে যাওয়ার মতো কোনও রক্তদাতার সন্ধানও ছিল না সবিতার স্বামী সাকিল মণ্ডলের কাছে। শেষমেশ হতাশ সাকিল ফোন করেন এক আত্মীয়কে। তাঁর মাধ্যমেই যোগাযোগ হয় ‘এমার্জেন্সি ব্লাড সার্ভিস’-এর গ্রুপের সদস্যের সঙ্গে। স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ থেকে বিষয়টি পোস্ট করা হয় তাদের নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বার্তা।

Advertisement

অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার রাতের খাওয়া সেরে বিছানায় শুয়ে মোবাইল ঘাঁটাঘাটি করছিলেন ধানতলার দত্তফুলিয়ার বাসিন্দা বছর ঊনত্রিশের কাঞ্চন ব্যাপারে। দত্তফুলিয়া বাজারে তাঁর একটি ছোট মোবাইল সারাইয়ের দোকান আছে। মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে রক্তদাতার সন্ধানের পোস্ট দেখতে পান তিনি। মুহূর্তে স্থির করে নেন, সমিতার প্রাণ বাঁচাতে রক্তদান করবেন। দ্রুত তৈরি হয়ে ফোন করেন পরিচিত এক গাড়িচালককে। যখন রওনা দেন কৃষ্ণনগরের উদ্দেশে, তখন রাত প্রায় সাড়ে বারোটা।

দত্তফুলিয়া থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ৩৭ কিলোমিটার। কাঞ্চন ব্লাড সেন্টারে এসে পৌঁছন রাত প্রায় সওয়া একটা নাগাদ। শুয়ে পড়েন রক্তদাতার বেডে। তখনও ঘটনাটা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না বাইরে দাঁড়ানো সুমিতা বিবির পরিবার। অচেনা এক রোগীর প্রাণ বাঁচাতে অত দূর থেকে মাঝ রাতে এসে পৌঁছছেন কেউ!

এর পর রাতেই রক্ত দেওয়া হয় জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুমিতা বিবিকে। শুক্রবার আপাতত সঙ্কটমুক্ত হয়েছেন কিছুটা।

রক্ত দিয়ে রাতেই বাড়ি ফিরেছেন কাঞ্চন। গাড়ি ভাড়ার আটশো টাকাও তিনি নেননি সুমিতার পরিবারের কাছ থেকে। এ দিন কাঞ্চন বলেন, “ধুর, এই টাকা কেউ নেয় নাকি! জীবনে অনেক টাকা উপার্জন করব। আগে তো মানুষটা বাঁচুক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন