লরি উঠলেই দুলতে থাকে সেতু

ভারি লরি উঠলে দুলে ওঠে সেতু। সেতু জুড়ে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত। নীচে ফিডার ক্যানেলের জল দেখা যায় সেই গর্ত দিয়ে। সেতুটিকে বিপজ্জনক মানছেন জাতীয় সড়কের নিরাপত্তার বিষয়ক আধিকারিকেরাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৮
Share:

সেতু দুললেও বিরাম নেই যান চলাচলের। — নিজস্ব চিত্র

ভারি লরি উঠলে দুলে ওঠে সেতু। সেতু জুড়ে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত। নীচে ফিডার ক্যানেলের জল দেখা যায় সেই গর্ত দিয়ে। সেতুটিকে বিপজ্জনক মানছেন জাতীয় সড়কের নিরাপত্তার বিষয়ক আধিকারিকেরাও। সেতু সারাইয়ের জন্য পাঁচ দফা সুপারিশও করেছেন। কিন্তু সবই খাতা-কলমে। হয়নি কোনও কিছুই। অবস্থা এমনই যে, হেঁটে সেতু পেরোতে ভয় পাচ্ছেন আহিরণের বাসিন্দারা।

Advertisement

সুতির আহিরণে ২০০ মিটার লম্বা ওই সেতুর উপর দিয়ে গিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। প্রতিদিন ১০ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলে সেতুর উপর দিয়ে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই মালবাহী লরি। একের পর এক লরি যখন সেতুর উপর ওঠে সেতুটি বিপজ্জনক ভাবে দুলতে থাকে। গত দু’সপ্তাহে সেতুর মধ্যে গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্তত আটটি মোটরবাইক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ফরাক্কার বাসিন্দা বাসচালক সুকমল দাস বলছেন, “দিনে দু’বার বাস নিয়ে সেতু পেরোই। বাস যত আস্তে চালাই না কেন সেতু এমন দোলে যে ভয় লাগে। আর গর্তে পরলে তো কথাই নেই।’’

Advertisement

প্রতিদিন লরিতে পাথর চাপিয়ে অজগরপাড়া থেকে মালদহ যান ফকির শেখ। তিনি বলেন, “আপ ডাউনে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি লরি ও বাস সেতুতে চাপলে সেতু এমন দোলে যে আতঙ্ক লাগে। দীর্ঘদিন সেতুটি মেরামতি হয়নি। ফলে গোটা সেতু জুড়ে অজস্র ছোটবড় গর্ত।’’

সেতুর পাশেই রেল লাইন। তবে সে সেতুটি পাশাপাশি থাকলেও পুরোপুরি আলাদা কাঠামোর উপর তৈরি তাই নয়, নিয়মিত তার সংস্কার ও রঙ করা হয়।

তৃণমূলের জেলা সম্পাদক আহিরণের বাসিন্দা আশিস ঘোষ বলেন, “সেতুর গর্তে পড়ে কত লোকে দুর্ঘটনা পড়েছে হিসেব নেই। বহুবার আমরা এ নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বলেছি। কিন্তু কোনও হেলদোল দেখায়নি তারা। ঝুঁকি চলছে যাত্রী ও যানবাহন।” স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য কংগ্রেসের আশিস তিওয়ারি বলেন, “জেলা পরিষদ বহুবার সেতু নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সেতুটি সারানোর কথা। তাদের সঙ্গে কথা বলব। রাজ্য সরকারের কোনও সাহায্য লাগলে তা
করা হবে।”

সেতুটি বিপজ্জনক মেনে নিয়ে গত ৫ এপ্রিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে আহিরণের এই সেতুটি পরিদর্শন করেন ওই দফতরেরই নিরাপত্তা দফতরের আধিকারিকেরা। সেতু সারানোর ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে সড়ক নির্মাণ বিষক নিরাপত্তা ইঞ্জিনিয়র শ্যামতনু দত্ত সতর্ক করে দিয়ে ৫ দফা সুপারিশ দ্রুত কার্যকর করার পরামর্শ দেন। কিন্তু কয়েক মাস কেটে গেলেও তা কার্যকর না হওয়ায় ফের তিনি সতর্ক করে দিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। কিন্তু রঙ করা ছাড়া আর কোনও কিছুই হয়নি।

এই পুরোনো সেতুর পাশেই তৈরি হচ্ছে ফোরলেনের একটি সেতু।

সেফটি ইঞ্জিনিয়রের রিপোর্ট অনুযায়ী, বছর খানেক আগে নতুন সেতুর স্তম্ভ এবং কাঠামো সম্পূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু স্টিল স্ট্রাকচার না মেলায় সে কাজ এখন প্রায় বন্ধ।

জাতীয় সড়ক দফতরের এক আধিকারিক জানান, কাঁচামালের অভাবে নতুন সেতুর কাজ ধিমেতালে চলছে। নতুন সেতু চালু হতে এখনও ছয় মাস লাগবে। অস্থায়ী ভাবে দু’বার পুরনো সেতুটি সারানো হয়েছে। কিন্তু সেফটি ইঞ্জিনিয়রের সুপারিশ মেনে সংস্কার করতে গেলে পুরনো সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে বেশ কয়েকদিন। সেটা সম্ভব হচ্ছে না বলেই পুরনো সেতুটিও সারানো যাচ্ছে না। জাতীয় সড়ক দফতরের মালদহের প্রজেক্ট ম্যানেজার দীনেশ কুমার হংসরিয়া ফোন ধরেননি। সেতুর এমন বেহাল দশার কেন তা জানিয়ে মেসেজ পাঠানো হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন