হাসপাতালের আউটডোরের দু’টাকার টিকিট বিকোচ্ছে দু’শোয়

কাউন্টারের সামনে থেকে লম্বা লাইনের ভিড়ে ঘুরে বেড়ায় দালালরা। তাঁরা টিকিটপিছু রোগীর বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে দু’টাকা টিকিটের  দাম পঞ্চাশ থেকে দু’শো টাকা নিয়ে থাকে।

Advertisement

প্রাণময় ব্রহ্মচারী

বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৮
Share:

বহির্বিভাগে-ভিড়: মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

টিকিটের দাম সাকুল্যে দু’টাকা!

Advertisement

অথচ অভিযোগ, দালালদের পাল্লায় পড়ে রোগীর বাড়ির লোকজন বাধ্য হচ্ছেন সেই টিকিট ১০০ টাকায় কিনতে। কখনও কখনও তার থেকেও বেশি টাকা দিতে হয় রোগীর বাড়ির লোকজনকে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের কাউন্টারে টিকিট
কেনার এটাই নাকি দস্তুর!

অভিযোগটা যে অমূলক নয়, তা মানছেন হাসপাতালের এক দালাল নিজেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই দালাল বলছেন, ‘‘ভিড়ের সঙ্গে টিকিটের দাম বাড়ার সম্পর্ক তো আছেই! কারণ, ভিড় হলেই মানুষ দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে চান না। অধৈর্য হয়ে পড়েন রোগী ও তাঁর বাড়ির লোকজন। তখন আমাদেরই একটু দেখতে হয় বইকি!’’

Advertisement

অভিযোগ, ঠিক তখনই বেড়ে যায়
দালালদের আনাগোনা। বেড়ে যায় টিকিটের দামও। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও অজানা নয়। কিন্তু শাসক দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় দালালদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে
পারেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গড়ে ৮-১০ হাজার রোগী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন। দালালরাও সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। এমনকি নিয়মিত যাঁরা ডাক্তার দেখানোর জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন, তাঁরা সকলেই দালালদের মুখ চেনেন। কাউন্টারের সামনে থেকে লম্বা লাইনের ভিড়ে ঘুরে বেড়ায় দালালরা। তাঁরা টিকিটপিছু রোগীর বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে দু’টাকা টিকিটের দাম পঞ্চাশ থেকে দু’শো টাকা নিয়ে থাকে। কখনও কখনও তারা তিনশো টাকাও চেয়ে বসে। নদিয়ার বেথুয়াডহরি থেকে বৃদ্ধ অনুকূল ঘোষ এসেছেন চোখের সমস্যায় ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু বহির্বিভাগের কাউন্টার চত্বরে তখন থিকথিকে রোগীর ভিড়। তিনি বিড়বিড় করছেন, ‘‘আগে যদি জানতাম! কখন যে ডাক্তার দেখানো হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ ততক্ষণে মহিলাদের লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সে দিকে লাঠি উঁচিয়ে রোগীদের লাইন ঠিক করতে তেড়ে যাচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ার। বহরমপুরের কাঁটাবাগানের মল্লিকা মণ্ডল লাইন থেকে গজগজ করতে বেরিয়ে এসে বলছেন, ‘‘মাত্র দু’টাকার টিকিট পেতে দু’শো থেকে তিনশো টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।’’ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের লম্বা লাইন ছাউনি পেরিয়ে ছাড়িয়ে হাসপাতাল চত্বরের খোলা রাস্তায় গিয়ে পড়েছে। রোদ, গরম থেকে বাঁচতে ছাতা মাথায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন ঝাড়খণ্ডের
এক বাসিন্দা।

শুধু পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড নয়, মুর্শিদাবাদ জেলা ছাড়াও নদিয়া , বীরভূমের একটা অংশের রোগীরা ভিড় জমাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই হাসপাতালে সেই দালাল-দৌরাত্ম্য চলছে রমরমিয়ে। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন