আগুন লাগলে ভাগ্যই ভরসা বাজারের

শুক্রবার ভর দুপুরে ডোমকল মধ্য বাজারে দাড়িয়ে প্রশ্ন উঠএছিল— এ পথে দমকল ঢুকবে? যাত্রা পালার মতো হেসে উঠলেন ব্যাবসায়ীর—‘‘গুলি খেয়ে মরে যাওয়া লোকের চোখটা বেঁচে গিয়েছে বলে আফসোস করার মতো গল্প বললেন কর্তা!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫১
Share:

বাজার জুড়ে রাখা দাহ্য জিনিসপত্র। নিজস্ব চিত্র

সরু গলি, ছড়ানো আনাজের ঝুড়ি। মাথার উপরে পলিথিন ঝোলানোর দড়ি ঝুলছে। ঝুলছে অগুন্তি বিদ্যুতের তার।

Advertisement

শুক্রবার ভর দুপুরে ডোমকল মধ্য বাজারে দাড়িয়ে প্রশ্ন উঠএছিল— এ পথে দমকল ঢুকবে? যাত্রা পালার মতো হেসে উঠলেন ব্যাবসায়ীর—‘‘গুলি খেয়ে মরে যাওয়া লোকের চোখটা বেঁচে গিয়েছে বলে আফসোস করার মতো গল্প বললেন কর্তা!’’

হাসতে হাসতেই জানাচ্ছেন, এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দমকল যতবার এসেছে আগুন নিভে যাওয়ার পরে। ছাইয়ে জল ঢেলেই পিরে গিয়েছে তারা। তাই আগুন নিয়ে তাঁরা আর বাবেন না। আস্ত বাজারের ভবিষ্যৎটাই ছেড়ে দিয়েছেন ভাগ্যের উপরে।

Advertisement

প্রায় ২০ বছর আগে ডোমকল মহকুমা হলেও এখনও দমকল কেন্দ্র চালু হয়নি। ফলে কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে বহরমপুর অথবা করিমপুরে দমকলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় মানুষকে। আর এই দুটো জায়গা থেকে দমকল আসতে সময় লাগে কম করে ঘণ্টা দেড়েক। ফলে আগুন নিয়ে ডোমকলের মানুষের অভিজ্ঞতা একটু অন্যরকমের। এখানে শহর বা গ্রাম যেখানেই হোক, আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষ দমকলের উপরে ভরসা না করে, নিজেরাই ঝাপিয়ে পড়েন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবি, এখন শহর বড় হচ্ছে। মানুষও আর আগের মত নেই। নিজের নিয়ে সকলে ব্যস্ত। ফলে আগের মত ঝাপিয়ে পড়ার মানসিকতা নেই। আগুন তাই গ্রাস করলে পুড়ে খাক হওয়া ছাড়া উপায় কি!

কিন্তু দমকল কেন্দ্র চালু হলেও কি এই ঘিঞ্জি বাজারে দমকলের ইঞ্জিন ঢুকবে কি করে? ডোমকল ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা গৌরাঙ্গ দত্ত বলে, ‘‘খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে আমাদের এই মধ্য-বাজার। ব্যস্ত সময়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে দমকলের ইঞ্জিন দুরের কথা মানুষ চলাচল করতে পারবে না ওই রাস্তায়। পায়ের নিজে আনাজের ঝুড়ি, মাথার উপরে রাস্তার এপার ওপার হয়েছে নাইলনের অজস্র দড়ি। পালাবে কোথায়!’’

বাজারের ওই রাস্তা দখলের ফলে ক্রেতারাও এড়িয়ে চলছেন ওই বাজার। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এতদিন প্রশাসন পঞ্চায়েত বলত পুরসভা না হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব না। এখন পুরসভা হয়েছে। কিন্তু ছবিটা সেই আগের মতই থেকে গিয়েছে। দিনের বেলা কোথাও আগুন লাগলে দমকলের পক্ষে দাড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

ডোমকলের পুরপ্রধান সৌমিক হোসেন বলেন, ‘‘সবে দায়িত্ব নিয়েছি, অনেক কাজ করতে হবে আমাদের। রাস্তার পাশের আনাজ বাজারকে স্থায়ী সেড দিতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেটা হলেই সমস্যা মিটে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন