দাওয়াই যেখানে মোবাইল

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ‘কল বুক’ ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু চিকিৎসক সেই অপেক্ষায় থাকবেন না। মোবাইলে ফোন পেলেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবেন রোগীর কাছে। এতে সময় ও রোগী দুই-ই বাঁচবে।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

যে রোগের যে ওষুধ! ডাক্তার আসার আগেই রোগী মারা গিয়েছে—স্কুলবেলায় এই বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ করতে হয়নি, এমন লোক খুব কমই আছেন। তাই বলে বাস্তবেও কি এমন ঘটনা ঘটে না?

Advertisement

নদিয়া কিংবা মুর্শিদাবাদের বহু হাসপাতালে কান পাতলেই শোনা যায়, ‘সেই কখন ডাক্তারকে খবর পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু এখনও এল না।’ কারও অভিযোগ, ‘আর একটু আগেই যদি ডাক্তার আসত, রোগী এ ভাবে মারা যেত না।’ নিট ফল, হাসপাতালে হইচই, ভাঙচুর, অশান্তি। নদিয়া জেলা হাসপাতালের দু’টি ক্যাম্পাসে এমন অভিযোগ ও বিশৃঙ্খলা কয়েক বার হয়েছে। এবার শক্তিনগর ও কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে রোগ সারাতে দাওয়াই হিসেবে দেওয়া হল ২০টি মোবাইল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ‘কল বুক’ ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু চিকিৎসক সেই অপেক্ষায় থাকবেন না। মোবাইলে ফোন পেলেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবেন রোগীর কাছে। এতে সময় ও রোগী দুই-ই বাঁচবে। দিন পনেরো আগে হাসপাতালের পক্ষ থেকে সেই মোবাইল তুলে দেওয়া হয়েছে নার্স, ব্লাড ব্যাঙ্ক, জরুরি বিভাগ-সহ বেশ কয়েক জন কর্তৃপক্ষের হাতে।

Advertisement

কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার জানান, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মোবাইল পরিষেবা চালু করার ফলে চিকিৎসকদের কাছে দ্রুত খবর পৌঁছে যাচ্ছে। তাঁরাও দ্রুত হাসপাতালে চলে আসছেন। সুপারের দাবি, “মোবাইল চালু হওয়ার পর থেকে সময় নিয়ে রোগী ও চিকিৎসক কোনও তরফ থেকেই কিন্তু অভিযোগ পাইনি।’’

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘কল বুক’এর পাশাপাশি মোবাইলে আস্থা রাখছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে নদিয়ার মতো হাসপাতালের তরফে মোবাইল দেওয়া না হলেও ব্যক্তিগত মোবাইলেই কাজ চলছে বলে জানা গিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সুহৃতা পাল বলছেন, “এখানে কল বুকের পাশাপাশি গোটা হাসপাতালে ইন্টার কমের ব্যবস্থা আছে। ওয়ার্ড মাস্টার, নার্সিং স্টাফদেরও নিজস্ব মোবাইল রয়েছে। প্রয়োজন হলে ফোনেই খবর দেওয়া হয় চিকিৎসককে।’’

এমন ব্যবস্থা যে জরুরি ছিল, তা কবুল করছেন রোগী ও চিকিৎসক উভয় পক্ষই। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের এক কর্মী জানাচ্ছেন, ধরুন, মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগী যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। কর্তব্যরত নার্সরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মাধ্যমে ‘কল বুক’ পাঠিয়েছেন সদর হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে। রোগীর নাম, কী রোগ, কী অবস্থায়, কোন ওয়ার্ডে রোগী রয়েছে তার বিশদ বিবরণ দিয়ে ভিড়, যানজট এড়িয়ে অন্য ক্যাম্পাসে চিকিৎসকের কাছে সেই ‘কল বুক’ পৌঁছতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। তার পরে সেই চিকিৎসক যখন শক্তিনগরে এসে পৌঁছলেন, দেখা গেল রোগীর অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। কখনও কখনও এই কারণে রোগী মারাও গিয়েছেন। তার পরে বিক্ষোভ, গণ্ডগোল, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ সবই হয়েছে। এ বার থেকে অন্তত সেই সব ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলবে বলেই আশা করা যায়। তবে ধুবুলিয়ার আব্দুল কাইয়ুম, আনন্দনগরের পবন সরকার বলছেন, “শুধু মোবাইলে খবর পাঠালে হবে না, চিকিৎসকরা ডাক পাওয়ার পরে সময় মতো আসছেন কি না, সেই নজরদারিটাও কিন্তু জরুরি।”

মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘নদিয়ায় এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। মুর্শিদাবাদ জেলার হাসপাতালগুলিতেও আমরাও চেষ্টা করছি, কল বুকের পাশাপাশি মোবাইল পরিষেবা চালু করার। এটা হয়ে গেলে রোগী ও চিকিৎসক উভয় পক্ষেরই সুবিধা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন