রাস্তায় ২৫ লক্ষ পরীক্ষার্থী

গ্রুপ ডি, ভয়ে ঘরবন্দি শহর

বড্ড দরকার ছিল কলকাতা যাওয়ার। জামা, জুতোর সঙ্গে সদ্য কেনা ঢাউস ছাতাটাও গুছিয়ে রেখেছিলেন।তার পর?ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কৃষ্ণনগরের পরিচিত মুখ, প্রদীপ মজুমদার বলছেন, ‘‘তার আর পর কি বলুন, এক দিনে তিরিশ-চল্লিশ লাখ মানুষ এক সঙ্গে রাস্তায় নামবে কলকাতামুখো ট্রেনেই উঠতে পারব!’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ০১:৫১
Share:

মেডিক্যালে: খোলা চাতালে। নিজস্ব চিত্র

বড্ড দরকার ছিল কলকাতা যাওয়ার। জামা, জুতোর সঙ্গে সদ্য কেনা ঢাউস ছাতাটাও গুছিয়ে রেখেছিলেন।

Advertisement

তার পর?

ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কৃষ্ণনগরের পরিচিত মুখ, প্রদীপ মজুমদার বলছেন, ‘‘তার আর পর কি বলুন, এক দিনে তিরিশ-চল্লিশ লাখ মানুষ এক সঙ্গে রাস্তায় নামবে কলকাতামুখো ট্রেনেই উঠতে পারব!’’

Advertisement

আশঙ্কাটা যে সংক্রামক, টের পাওয়া যাচ্ছে বহমপুরের এক্রামুল আলির কথাতেও। মামাতো ভাই আলিপুরের ডাকসাইটে নার্সিংহোমে ভর্তি। কিন্তু বিকেলের ভিজিটিং আওয়ার্সে সেখানে যাওয়া কি ‘চাট্টিখানি’ কথা? এক্রামূলের গলায় অস্বস্তি, ‘‘কী করি বলুন দেখি বহরমপুর থেকে ঠেঙিয়ে কলকাতা পৌঁছে ভিড় ঠেলে হাসপাতালে পৌঁছন চাট্টিখানি কথা!’’

ভয়টা যে একেবারে ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে, এমন বরাভয় অবশ্য দিতে পারছে না প্রশাসনও। এক সঙ্গে চল্লিশ লাখ লোকের ধাক্কা!

সে ধাক্কার নাম, গ্রুপ ‘ডি’ প্রবেশিকা পরীক্ষা। রাজ্য সরকারের গ্রুপ ডি নিয়োগ পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ লক্ষ ৬৮ হাজার। ধরেই নেওয়া হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের অনেকের সঙ্গেই থাকবেন এক বা একাধির সঙ্গী। ফলে বাড়তি এই চল্লিশ লক্ষ মানুষের চলাচল শুধু কলকাতা নয়, জেলা শহরগুলিকেও যে প্রায় অগম্য করে তুলবে, এমন আশঙ্কায় প্রকপালে ভাঁজ পড়েছে প্রাশাসনের।

প্রবাসে-পরীক্ষার্থী: পরীক্ষার আগের রাতটা তাঁদের এ ভাবেই কাটল। কেউ খোলা প্ল্যাটফর্মে, কেউ বা হাসপাতালের খোলা চাতালে। বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

শনিবার নদিয়া জেলার সমস্ত পুলিশ কর্মীর তাই ছুটি বাতিল। পুলিশ লাইন থেকেও প্রায় দেড়শো জন কর্মীকে নামানো হয়েছে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন মোড়ে। একই চেহারা মুর্শিদাবাদেও। দুই জেলাতে প্রতিটি রুটে কোনও বাস বা অন্য কোনও যাত্রীবাহী যানবাহন যাতে হঠাৎ বসে না যায় সে জন্য মালিক সংগঠন গুলিকে আগাম সতর্ক করেছে পরিবহণ দফতর। বাস মালিকদের পাশাপাশি ট্রেকার, অটো ও টোটো মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রশাসনিক কর্তারা।

নদিয়া জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৫৭ হাজার সাতশো পরীক্ষার্থী রয়েছেন। পরীক্ষাকেন্দ্র ২৯১টি। আর মুর্শিদাবাদে, সংখ্যাটা ১. ৪৩ লক্ষ। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৩০২টি। প্রতিটি কেন্দ্রেই পুলিশ মোতায়ন থাকবে। এ ছাড়াও প্রতিটি থানা এলাকা থাকবে পুলিশের একাধিক টহলদারি গাড়ি। স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মোতায়ন করা হবে পুলিশ। সেখানে মাইক প্রচারও করা চলবে। দুই জেলা সদরে যানজট এড়াতে শহরে ঢুকতে দেওয়া হবে না লরি কিংবা মালবাহী গাড়ি।

প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে থাকবে প্যারা-মেডিক্যাল টিম। গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে জ্বর, ডায়েরিয়ার ওষুধ থাকবে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে। পুরসভা ও ব্লকে চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়ে একটি আলাদা মেডিক্যাল টিমও গড়ে দিয়েছে দুই জেলার স্বাস্থ্য দফতর। থাকবে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও।

পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার দেখভালের দায়িত্ত্বে থাকছেন দুই জেলার অতিরিক্ত দুই জেলাশাসক। খোলা হচ্ছে আলাদা কন্ট্রোল রুমও।

মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলা শাসক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, “নির্বাচনের সময় যে ধরনের তৎপরতা থাকে শনিবার সে ভাবেই প্রশাসনকে সাজিয়ে রাখছি আমরা।’’ নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তাও অভয় দিচ্ছেন, “আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সব নির্বিঘ্নেই হবে।”

তেব, প্রদীপবাবুদের আশঙ্কা অবশ্য তাতে কমছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন