সরকারি লেদার ইউনিটে গাড়ি ভরে আশপাশের অঞ্চল থেকে নিয়ে আসা হত মৃত পশু। চাঁদমারিতে খাদি ও গ্রামোদ্যোগ কমিশনের সেই ইউনিটে পশুদের হাড় থেকে চামড়া আলাদা করা হত। কিন্তু সেখান থেকেই যে মৃত পশুর মাংস বেআইনি ভাবে চালান হয়ে যাচ্ছিল বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয়, সে খবর ঘুনাক্ষরেও কেউ জানতে পারেননি।
ভাগাড়ের মাংস বিক্রির কাণ্ডের তদন্তে নেমে এই তথ্য ফাঁস হয়েছে পুলিশের কাছে। বজবজ থানার পুলিশ উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ধৃত সারাফাত নামে এক জনকে জেরা করে কল্যাণীর গয়েশপুর পুরসভার দু’বারের বাম কাউন্সিলর মানিক মুখোপাধ্যায়ের নাম পায়। বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের একটি দল কল্যাণীতে আসে। দুই জেলার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে বছর বাষট্টির মানিককে গ্রেফতার করে। কল্যাণী মহকুমা পুলিশের এক কর্তা জানান, মানিককে গ্রেফতার করার পর আরও কয়েক জনের নাম উঠে আসবে, এ ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত। মানিক পশ্চিমবঙ্গ খাদি কেন্দ্রের এক জন কর্মী ছিলেন। ২০১৬ সালে অবসর নেওয়ার পরেও তিনি সেখানে চুক্তিভিত্তিতে কাজ করতেন।
মানিকবাবুর বিরুদ্ধে এর আগে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশের দাবি, অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় সেই সময় তাঁর গায়ে কোনও আঁচ লাগেনি। গয়েশপুর পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, মানিকবাবু তাঁর অবৈধ মাংসের ব্যবসাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য গত বছরের ডিসেম্বর মাসে পুরসভায় ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত গয়েশপুর পুরসভার চেয়ারম্যান মরণকুমার দে বলেন, ‘‘ওই প্রাক্তন কাউন্সিলর বলেন, দশটি গাড়ি ব্যবহার করে কলকাতায় পশুর চামড়া ও হাড় কলকাতায় পাঠাবেন। তাতে আপত্তি ওঠে। বোর্ডের বৈঠকে অনেক কাউন্সিলর তাতে আপত্তি জানান। বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ হয়েছিল। তার পরেও এই অবৈধ কারবারে ছেদ পড়েনি।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানাচ্ছেন, মানিক নিজের থেকে এখনও পর্যন্ত দোষ কবুল করেননি। কিন্তু পুলিশের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। সারাফাতের সঙ্গে মানিকের ব্যবসায়িক যোগের বিষয়ে তদন্তকারীরা নিশ্চিত। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ওই কেন্দ্রে মৃত পশুর চামড়া ও হাড় কাজে লাগানোর পরে মাংস মাটিতে পুঁতে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। সেই মাংস পাচার হয়ে গিয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, মাংস মূলত কলকাতা ও শহরতলিতে যেত। বিশেষ করে পাশের জেলা মুর্শিদাবাদেও এই চক্র সক্রিয় ছিল বলে পুলিশের অনুমান।