রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নিতে আজ, শনিবার রাজ্যে আসছে সিবিআই। নবান্নের একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, গত বৃহস্পতিবারই সিবিআই চিঠি দিয়ে তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছিল রাজ্যকে। শনিবার যে তারা কলকাতায় আসবে, তা-ও বলেছিল। তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এ দিনই সোজা রানাঘাটে যাবেন, না কি তার আগে সিআইডি-কর্তাদের সঙ্গে ভবানী ভবনে বৈঠক করবেন, শুক্রবার রাত পর্যন্ত তা জানাতে পারেনি রাজ্য প্রশাসন।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে অবশ্য খবর, আনুষ্ঠানিক ভাবে রানাঘাট তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া-নেওয়া নিয়ে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। কী সেই প্রক্রিয়া? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, কোনও মামলা সিবিআইকে দিতে গেলে দিল্লি স্পেশাল পুলিশ আইনের ৬ নম্বর সেকশনে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয় রাজ্যকে। তাতে জানাতে হয়, সংশ্লিষ্ট মামলার এফআইআর, কেস ডায়েরি ও এই সংক্রান্ত কী কী তথ্য সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে চায় রাজ্য সরকার। সেই বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি হাতে পাওয়ার পরে সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের অধীন কর্মিবর্গ দফতরের (ডিওপিটি) কাছে ওই মামলার তদন্তভার হাতে নেওয়ার অনুমতি চায়। ডিওপিটি অনুমোদন দিলে তবেই দিল্লি স্পেশাল পুলিশ আইনের ৫ নম্বর সেকশনে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সিবিআই সরকারি ভাবে মামলা হাতে নেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়।
শুক্রবার দিল্লিতে সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়েছে, সরকারি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে কেন্দ্রের কর্মিবর্গ দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। তার পরেই তদন্ত শুরু হবে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সিবিআই তদন্তের জন্য যে আবেদন জানানো হয়েছিল, সেই আবেদন অসম্পূর্ণ ছিল। তাই আবেদনের জন্য যে নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে তা মেনে নতুন করে আবেদন করতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র কে এস ধাতওয়ালিয়া বলেন, “বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারকে নতুন করে আবেদন করার কথা বলা হয়। শুক্রবার রাত পর্যন্ত তা আসেনি বলেই জানি। যার ফলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা সম্ভব হচ্ছে না।” তবে এটা নেহাতই প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। রাজ্য প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে চিন্তিত নয়। কারণ তদন্তভার নেওয়ার ব্যাপারে যে তাদের কোনও আপত্তি নেই, সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে সিবিআই।
নবান্নের তরফে আবার দাবি করা হয়েছে, রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব যে তারা নিচ্ছে সে কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবারই চিঠি দিয়েছে সিবিআই। এমনকী তদন্ত চলাকালীন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা কোথায় থাকবেন, তা-ও ঠিক করে রাখতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে অতিরিক্ত কী কী পরিকাঠামো তাদের প্রয়োজন, সিবিআই সে কথাও জানিয়েছে বলে নবান্নের দাবি। প্রশাসনের শীর্ষমহলের একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে চায় বলে দু’দিন আগে চিঠি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই চিঠিকেই দিল্লি স্পেশাল পুলিশ আইনের ৬ নম্বর সেকশনে বিজ্ঞপ্তি হিসেবে গ্রহণ করার আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই আর্জি মেনেই সিবিআই দলের তদন্তভার নেওয়ার কথা রাজ্যকে জানিয়েছে দিল্লি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে যদিও বলা হচ্ছে, নবান্নের তরফে একটি চিঠি দিয়ে কেবল জানানো হয়েছিল, রাজ্য প্রশাসন চায় রানাঘাটের ঘটনার তদন্ত করুক সিবিআই। তার পরেই রাজ্যকে রীতি মেনে আবেদন জানাতে বলা হয়েছে।