Kazi Nazrul Islam

জীর্ণদশায় নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ‘সেল’! বিদ্রোহী কবির ‘বন্দি’ জীবনের স্মৃতি অবহেলিত

১৯২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নজরুলের কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’। তাঁর এই ‘বিদ্রোহ’ মেনে নিতে পারেনি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় কবিকে। তখনই এই সেলে ঠাঁই হয়েছিল তাঁর।

Advertisement

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ ২৩:১৬
Share:

কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত সেই কারাকক্ষ (সেল) অবস্থা প্রায় জীর্ণ। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের দোতলায় অবস্থিত ওই ঘরটিই এক সময় ছিল জেলের সেল। সেখানেই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কলম ধরা বিদ্রোহী কবিকে প্রায় ছয় মাস (১৯২৩ সালের ১৮ জুন থেকে ১৫ ডিসেম্বর) কারাবন্দি করে রাখা হয়েছিল। এখন সেই ঘরের বাইরে বড় তালা ঝুলছে। ভেঙে পড়ছে ওই ঘরের ছাদ। ছুঁইয়ে পড়ে জল। দেওয়ালের চুন-সুরকি খসে পড়েছে, মেঝে জুড়ে ফাটলের জাল। ঘরের ভেতরে-বাইরে বটগাছের শেকড় ছড়িয়ে প্রকৃতি যেন নিজেই দখল নিচ্ছে ইতিহাসের এই স্তূপ। এক সময় যাকে ‘নজরুল ওয়ার্ড’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছিল, আজ তার অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্তির পথে।

Advertisement

১৯২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নজরুলের কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’। তাঁর এই ‘বিদ্রোহ’ মেনে নিতে পারেনি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। রাজদ্রোহের অভিযোগ এনে ১৯২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় কবিকে। কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল, আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, হুগলি জেল পেরিয়ে ১৯২৩ সালের ১৮ জুনে তাঁকে নিয়ে আসা হয় বহরমপুর ডিস্ট্রিক্ট জেলে (বর্তমান মানসিক হাসপাতাল)। কারাবন্দি করলেও থামানো যায়নি কবির কলম। জেলে বসেই লিখেছেন তাঁর একের পর এক সৃষ্টি। বহরমপুরের এই কারাগারে বসেই তিনি রচনা করেন ‘সত্যের আহ্বান’, ‘মরমী’, ‘ইন্দুপ্রয়াণ’-এর মতো কালজয়ী কবিতা ও গান। নজরুল গবেষক সৈয়দ খালেদ নৌমানের মতে, “এই সেলটি শুধু একটি কক্ষ নয়, বাংলার সাহিত্য ও স্বাধীনতা আন্দোলনের এক জীবন্ত সাক্ষী।” গবেষকেরা বলেন, এই কবিতাগুলো শুধু সাহিত্য নয়, ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল ভাঙার মন্ত্র।

নব্বইয়ের দশক পর্যন্তও প্রতি বছর নজরুলের জন্মদিন পালিত হত এই ঘরে। কিন্তু বর্তমানে সেই ঘরটির সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। অবশ্য স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে নবনির্মিত একটি ওয়ার্ডকে কবির নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। আগে ঘটা করে এই হাসপাতালেই অনুষ্ঠিত হত নজরুলের জন্মবার্ষিকী। মানসিক হাসপাতালের রোগীরাও অংশ নিতেন অনুষ্ঠানে। তবে এখন সেই সব স্মৃতি। নজরুলের শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকু প্রায় ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে।

Advertisement

‘নজরুল ওয়ার্ডের’ সিস্টার ইনচার্জ ডালিয়া টিকাদার আক্ষেপের সুরে জানান, বিদ্রোহী কবির স্মৃতি বিজড়িত সেল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলা সংস্কৃতির এক টুকরো ইতিহাস। এই সেল পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণ করলে তাতে শুধু নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের সঠিক পাঠও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement